×

সারাদেশ

চৌগাছায় সন্তান বিক্রির ৭০ হাজার টাকা পুলিশ সোর্সের পকেটে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম

চৌগাছায় সন্তান বিক্রির ৭০ হাজার টাকা পুলিশ সোর্সের পকেটে!

চৌগাছা থানা

যশোরের চৌগাছায় এক গর্ভধারীনির বিরুদ্ধে সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে। সন্তান জন্ম ও বিক্রির একমাস পর গত ২৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ওই নারীকে গ্রামের এক যুবকের সাথে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়। পরে সন্তান বিক্রির সেই টাকা চৌগাছা থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার কথা বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পুলিশের এক সোর্স নিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দুলিয়া গ্রামে। বুধবার (২৫অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের আবু সাঈদের বাড়িতে গেলে তিনি নববিবাহিতা স্ত্রীকে পাশে বাসিয়ে বলেন, গ্রামের একব্যক্তির (ভারতের জেলে ২ বছর ধরে বন্দি) স্ত্রীই তার বর্তমান স্ত্রী। ওই ব্যক্তি জেলে থাকাবস্থায় এই সোনিয়ার সাথে তার প্রেমর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে সোনিয়া গর্ভবতী হয়ে পড়লে শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিষয়টি জেনে ফেলে। তখন সোনিয়া পুড়াপাড়া বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠে। পরে গত একমাস আগে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোনিয়া একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সেখানে সন্তানের বাবা হিসেবে সাঈদের পরিচয় ব্যবহার করা হয়। এসব কিছুতে মধ্যস্থতা করে গ্রামের রকি নামে পুলিশের এক সোর্স এবং স্বরূপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের মুকুল হোসেন নামে এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পরে বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে সেই সন্ত্রাসী মুকুলের বাড়িতে ছয়দিন থাকে সোনিয়া। এরপর রকির মধ্যস্থতায় নিঃসন্তান মুকুল ছয়দিনের মেয়েকে ৭০ হাজার টাকায় স্ট্যাম্প করে কিনে নেয়। এরপর সোনিয়া ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে নিজের শ্বশুর বাড়িতে যায়। এরপর গ্রামের পুলিশ সোর্স রকি ও চৌগাছা থানার একজন এসআই আমার বাড়িতে আসে। এ বিষয় নিয়ে থানার মামলা ঠেকাতে এবং ওপরের মহলকে দেয়ার জন্য রকি ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আবু সাঈদের আরও বলেন, মঙ্গলবার বাচ্চাটির ক্রয়কারী মুকুল, গ্রামের মেম্বার মহিদুল চৌগাছা থানার এসআই আশিকসহ চারজন পুলিশ নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। সোনিয়াকে আমার বিয়ে করতে হবে বলে হুমকি দেয় তারা। আমি প্রথমে রাজি না হলে মুকুল আমাকে দুই দফা বেদম মারপিট করে। চৌগাছা থানার এসআই আশিকও আমাকে লাঠি দিয়ে একটা বাড়ি দেয়। পরে বিয়েতে রাজি হলে একজন কাজী ডেকে প্রথমে সোনিয়ার আগের স্বামীকে তালাক দেয়া হয় এবং আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থানার এসআই আশিক আমার বাবার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। সোনিয়া বলেন, সন্তানটি এই আবু সাঈদের। তাহলে বিক্রি করে দিলেন কেন প্রশ্নে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তখন তো আমাদের বিয়ে হয়নি। এছাড়া মুকুল জোর করে স্টাম্প করে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিয়ে করতে রাজি হওয়ার পরও পুলিশ আমাকে ও আবু সাঈদকে বাড়ি থেকে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে যায়। বলে, ধর্ষণ মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসাবে। পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমার শ্বশুর (জালাল উদ্দিন)-শাশুড়িসহ পুলিশ ও মেম্বারের হাতে-পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় মীমাংসা করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গ্রামের ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সাংবাদিক যাওয়ার সংবাদ শুনেই শিশু মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় নারী পাচারকারী, মাদক, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামী ও শিশুটিকে ক্রয়কারী সন্ত্রাসী মুকুল হোসেন। তবে মুকুলের পিতা আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ওরা সন্তান ফেরত নিতে চাইলে আমরা ফেরত দিয়ে দেব। এদিকে চৌগাছা থানার এসআই আশিক বলেন, ঘটনাটি মীমাংসার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মুকুল আদালত থেকে কাগজপত্র করে বাচ্চাটিকে কিনেছে। টাকা নেয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App