×

সারাদেশ

সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম

সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি

মো. নাজিমুল ইসলাম জামালের বিরুদ্ধে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ। ছবি: ভোরের কাগজ

সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি
সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি
সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি

মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহা জাহানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেয়ার কথা ফাঁস হওয়ায় এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়ের রেশ না কাটতেই এবার তার স্বামী মো. নাজিমুল ইসলাম জামালের বিরুদ্ধে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত নাজিমুল ইসলাম জামাল সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের পারিল রফিকনগর গ্রামের মৃত ধলুর ছেলে। সে উপজেলা শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের উকিল মেয়ের জামাই বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে পৌরসভার আঙ্গারিয়া মহল্লায় বসবাস করছেন।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ধল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ভুক্তভোগী মো. সফর উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জামাল ও তার আরেক সহযোগী আমানত হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে প্রকাশ, তার নামে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া বীরনিবাস ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজের শুরুতে মালামাল পরিবহণ ও মাটি ভরাটের জন্য তাকে চাপ দিয়ে ৬০ হাজার টাকা খরচ করায় জামাল। এরপর ৫ মাস কাজ বন্ধ রেখে নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সফর উদ্দিনের কাছে ২ গাড়ি ইটের মূল্য বাবদ ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্মাণ কাজ হবে না বলে জানান।

সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি

ওই মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভের সাথে বলেন, ঘর নির্মাণ শেষ না হওয়ায় অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে অন্যের ঘরে বসবাস করছি।

সরেজমিন কথা হয় একই গ্রামের ভুক্তভোগী আরেক মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের সাথে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জামাল আমাকে দিয়ে ২৫ হাজার টাকার বালু ভরাট করিয়েছে। সেই সাথে ঘর নির্মাণ কাজের জন্য ইট দাবি করে। ইট না দেয়ায় ২-৩ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করে জামাল। আমি অভিযোগ করলে পিআইও এবং ইঞ্জিনিয়ার এসে সত্যতা পায়। সেগুলো পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বললেও তারপর থেকে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে, গাজিন্দা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ ২৫ হাজার ও আলাউদ্দিনকে ৩০ হাজার টাকা বালু ভরাট ও পরিবহণের জন্য খরচ করতে হয়েছে।

জায়গীর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন নান্নু অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কাজ বন্ধ রাখায় আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। বিল না পাওয়ার অজুহাতে ঘর নির্মাণে গত রমজান মাস থেকে তালবাহানা শুরু করেছে জামাল।

অভিযুক্ত মো. নাজিমুল ইসলাম জামাল বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সরকারি বিধি মোতাবেক কাজ হচ্ছে।

সিংগাইরে বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাকা দাবি

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আহাদী হোসেন বলেন, বীরনিবাস নির্মাণে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের ঘর নির্মাণে কিছু নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলো পরিবর্তন করে দিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বীরনিবাস নির্মাণে বালু ভরাট ও পরিবহণ খরচের অজুহাতে টাকা পয়সা নেয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার মিটিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত মো. নাজিমুল ইসলাম জামালের স্ত্রী জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহা জাহানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেয়ার কথা ফাঁস হওয়ায় ২৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজে ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয়ার আশ্বাসে মহিলা লীগ নেত্রীর অর্থ বাণিজ্য’ ও ২৯ সেপ্টেম্বর ভোরের কাগজ লাইভে ‘ফোনালাপ ফাঁস, মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর কথা বলে যুব মহিলা লীগ নেত্রীর অর্থ বাণিজ্য’ শিরোনামে স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে সালেহা জাহানের ছোট ভাই ধল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার দৈনিক ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মাসুম বাদশাহকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকি দেন। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক মাসুম বাদশাহ বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App