×

সারাদেশ

মাধবপুরে বালু লুটের হিড়িক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম

মাধবপুরে বালু লুটের হিড়িক

মাধবপুরে বালু লুটের হিড়িক। ছবি: রাজীব দেব রায় রাজু, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সোনাই নদী বহরা রাবার ড্যামের সংরক্ষিত এলাকা থেকে বালু লুটের হিড়িক পড়েছে। সোনাই নদীর রাবার ড্যাম এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে মাধবপুর উপজেলা প্রশাসন। বালু উত্তোলন বন্ধে সোনাই নদীর রাবার ড্যাম এলাকা জুড়ে বেশ কিছু সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

মাধবপুর উপজেলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন রাবার ড্যাম এলাকায় সাইনবোর্ডগুলো স্থাপন করেন। কিন্তু বালু খেকোরা এই সব সাইনবোর্ড কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন দিনে রাতে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এই সব চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তি, ড্রেজার মালিক, বালু কারবারি। ড্রেজার মেশিন দিয়ে নির্বিচারে বালু তোলায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যসস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালীরা বালু তোলার কারনে নদী ভাঙন, রাবার ড্যামের ক্ষতি হচ্ছে। ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে বালু উত্তোলনে বিধি নিষেধ থাকলেও কিছুই মানছে না বালুখেকোরা। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর সর্বনাশ ডেকে আনছে তারা।

জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৭ মার্চ হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান স্বাক্ষরিত হবিগঞ্জ জেলার বেশ কয়েকটি বালু মহাল ১৪৩০-১৪৩১ সালের জন্য ইজারা দেয়া হয়। এই সব বালু মহালের মধ্যে রয়েছে- মনতলা ও চৌমহনী এলাকার বালু কোয়ারি। মৌজার নাম কাশিমপুর, আলাবক্সপুর, মনোহরপুর, মঙ্গলপুর, গাজীপুর, আশ্রফপুর। মনতলা কোয়ারির মৌজার নাম বোরহানপুর, ভবানীপুর, দূর্লভপুর, আফজলপুর, বহরা। রসুলপুর কোয়ারির কিছু বালু মহাল রয়েছে মৌজার নাম এক্তারপুর, ভান্ডারুয়া, শাহজাহানপুর, সম্পদপুর, বড় ধলিয়া, সেলিমপুর, রসুলপুর উত্তর।

টেন্ডার নোটিশের ১৪ নম্বর শর্তে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে- ভূউপরিভাগ হতে পাচ মিটার গভীরতা পর্যন্ত অযান্ত্রিক (কোদাল, শাবল, বালতি ও ঝুড়ি) দিয়ে বালু উত্তোলন করতে হবে। সিলিকাবালু উত্তোলনের শেষে মাটি বালু দিয়ে পুনরায় খননকৃত ( কুপ/গর্ত) ভরাট করে দিতে হবে।

১৫ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে কোয়ারির অস্তিত্ব রক্ষায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বোমা মেশিন ড্রেজার বা অন্য কোন যন্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ এবং জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৮ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে- সেতু কালভার্ট ডাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক মহাসড়ক, রেল লাইন ও অন্যান্য পূর্নসরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা থেকে সর্বনিন্ম ১৫০ মিটার, বসত বাড়ি, জনপথ, ভবন, শিক্ষা স্থাপনা, কবরস্থান ৫০ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে কোয়ারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে- বালু উত্তোলনকারীরা বড় বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সেতু, রাবার ড্যাম, বসত বাড়ির আশেপাশ থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বহরা রাবার ড্যাম এলাকার ৫০০ মিটারে মাঝে বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিপণন বন্ধ করার জন্য সাইনবোর্ড লাগানো হলেও এই মানছে না কেউ।

রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া জানান, একটি প্রভাবশালী মহল অনেকটা জোরপূর্বক রাবার ড্যামের আশে পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। তাদেরকে কয়েকবার নিষেধ করা হলেও তারা শুনে না।

রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবত রাবার ড্যামের নিকট থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে রাবার ড্যামটি অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি অনেকবার বাধা দিয়েছেন কিন্তু মাটি বালুখেকোরা বাধা মানে না।

বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন জানান, আনু মিয়া নামে জনৈক এক ব্যক্তি রয়েছেন তিনি নিয়মিত বালু ও মাটির ব্যবসা করেন। তার সাথে আরও কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। তারা রাতের আধাঁরে বাঁধের মাটি বিক্রি করে মোটামুটি সাভার করে ফেলেছে। সরকার যদি তাদের ইজারা দিয়ে থাকেন তাহলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের দাগ, খতিয়ান ইত্যাদি বুঝিয়ে দেয়ার কথা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব যদি এই কাজটা করতেন তাহলে চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি নিশ্চিত জানতেন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত বিন কুতুব জানান, বালু মহালগুলো পরিবেশ- জ্বালানি মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসক থেকে ইজারা দেয়া হয়। রাবার ড্যাম এলাকাটি লিজকৃত জায়গার মধ্যে পড়েছে তাই যারা লিজ এনেছে। তারা বালু উত্তোলন করছে।

রাবার ড্যাম এলাকার আশে পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা নিষেধ করা হলেও তারা কিভাবে বালু উত্তোলন করছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

যারা লিজ এনেছেন উনাদের ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য উনাকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি।

মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনজুর আহসান জানান, রাবার ড্যামটি পড়েছে বালু মহালের ভিতর। মনোহরপুর মৌজায়। তাই যারা লিজ নিয়েছে তারা আইনগতভাবে বৈধ।

রাবার ড্যামের আশেপাশ থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে পূর্বে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছিল রাবার ড্যামের আশেপাশ থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রি বন্ধ রাখার জন্য। তাহলে তারা কিভাবে বালু উত্তোলন করছে। এমন প্রশ্নে তিনিও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

যারা বালু মহাল ইজারা নিয়েছেন উনাদের ওয়ার্ক অর্ডার ও সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে এসিল্যান্ডের সুরেই বলেন, উনাকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App