×

সারাদেশ

ফৌজদারহাটে সমুদ্র পাড়ে নৌ-মিউজিয়াম করবে জেলা প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৮ এএম

ফৌজদারহাটে সমুদ্র পাড়ে নৌ-মিউজিয়াম করবে জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রামে বিশ্ব পর্যটন দিবসে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন । ছবি: ভোরের কাগজ

একসময়ে চট্টগ্রামেই তৈরি হতো সমুদ্রগামী জাহাজ, নৌকা। আর সেসব জাহাজ ও নৌকা বিদেশে রফতানি হতো। চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কিত নানা বই ও দলিল দস্তাবেজ থেকে তাই জানা যায়। বিভিন্ন আকারের ও নানাবৈচিত্রের এসব নৌযানের বেশ কদর ছিল বিদেশে। আর তা তৈরি করতেন চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল এবং কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী অঞ্চলের দক্ষ কারিগররাই। কিন্তু নানা কারনে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে সে ঐতিহ্য। তবে গত কয়েকবছরে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে আধুনিক প্রযুক্তির সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে আগে যেসব জাহাজ ও নৌকা তৈরি হতো তা ছিল একান্তই নিজস্ব প্রযুক্তি ও এ দেশীয় কারিগরদের বুদ্ধিমত্তা ও নির্মাণ কৌশলে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে নিজেদের সেই ইতিহাস- ঐতিহ্য অনেকটাই অজানা।

তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ অঞ্চলের নৌযানের ঐতিহ্য সংরক্ষণসহ এ সংক্রান্ত তথ্য সমৃদ্ধ একটি নৌ- মিউজিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বুধবার চট্টগ্রামে পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমনটাই জানালেন চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি জানালেন ফৌজদারহাটে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সরকারি জমিতে যে ডিসি পার্ক করা হয়েছে তার পাশে এই নৌ মিউজিয়াম গড়ে তোলা হবে। তিনি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্যাবলী সংগ্রহ করেছেন তারা। তবে এই মিউজিয়ামে হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে নৌকাগুলো রয়েছে সেগুলোর স্মৃতি নিয়ে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেছেন- সেখানে বড় আকারে ময়ুর-পঙ্খী, বজরা, সাম্পান, বিভিন্ন ধরণের নৌকার রেপ্লিকা থাকবে। ভবিষ্যতে এগুলোতে থ্রিডির মাধ্যমে এগুলোর ফ্যাসিলিটিস রাখার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে করে ঝড়ের সময় জেলে ও মাঝি-মাল্লারা নৌকা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা সাজাতে পারেন। আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হবে। বুধবার বিশ্ব পর্যটন দিবসে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনাসভা, বর্নাঢ্য মিছিল, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরন করা হয়। জেলা প্রশাসক বলেন, গুলিয়াখালী বীচ ও খৈয়াচড়া বীচের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। পতেঙ্গা সী-বীচের বেহাল অবস্থা। সেখানে টয়লেট-ওয়াশরুম স্থাপন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, লকার রুম, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্রেস্টফিডিং কর্ণার স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে শুধু পতেঙ্গা সী-বীচে নয়, প্রত্যেক পর্যটন স্পটে ট্যুর আপারেটরদের নিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট উন্নতমানের খাবারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানের সভাপতিত্বে, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও আইসিটি) আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এস.এম সফিউল্লাহ, ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরওয়ার কামাল দুলু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মো. আবু রায়হান দোলন।

জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান শ্রীলংকার ঘুরে দাড়ানোর উদাহরণটি উল্লেখ করে বলেন, কারণ তাদের ট্যুরিজম সেক্টর প্রসারিত হয়েছে। তাদের সে সুযোগটি রয়েছে, বেশি ইনভেস্টমেনেরও প্রয়োজন নেই। এ দেশে আগের তুলনায় আমাদের ডোমেস্টিক ট্যুরিজম অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। আমাদের চট্টগ্রামে যে ট্যুরিস্ট স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলেই পর্যটনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের।

আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আমরা রিভার ক্রুজ চালু করার ব্যাপারে ওয়েস্টার্ন মেরিন ও কর্ণফুলি নামক দুটি বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাদেরকে তাদের দুটো জাহাজ দেবে এবং আমরা প্রাথমিকভাবে শুক্র-শনিবারে এগুলো চালু করবো।

জেলা প্রশাসক প্রাইভেট ট্যুর অপারেটরদের উদ্দেশে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শোষণ- নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুতিকাগার চট্টগ্রাম। ইউরোপিয়ান ক্লাব, বীরকন্যা প্রীতিলতা, মাস্টার দা সূর্য সেনের পৈত্রিক ভিটা, ফয়স লেক, চিড়িয়াখানা আছে, সেগুলো নিয়ে আপনারা ট্যুরিজমের চিন্তাভাবনা করতে পারেন। অনেক দেশি-বিদেশী এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চায়। কাট্টলীর রানী-রাসমনি ও আকমল আলী ঘাটে জেলে পল্লী আছে, তাদেরকে নিয়ে কথা বলতে পারেন। ৫/১০টি পরিবার নিয়ে তাদের লাইফ স্টাইল নিয়ে আপনারা কাজ করতে পারেন, তাবু নিয়ে অবস্থান করে দেখতে পারেন যে তাদের জীবন কেমন কাটে। তাদের খাবারের ব্যবস্থাসহ সেখানে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম করতে পারেন। ট্রাইবাল কমিউনিটি, ফিস মার্কেট, টি-গার্ডেন নিয়ে কাজ করতে পারেন, এগুলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App