×

সারাদেশ

বাউফলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম

বাউফলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি

বাউফলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি । ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফলে প্রায় রাতেই ঘটছে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোর-ডাকাত চক্র। উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি দেখা দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনও চুরি ডাকাতি ঠেকাতে দৃশ্যমাণ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ঘটনার পর পরিদর্শন করেই তাদের কাজ শেষ করেন। এর ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ২ শতাধিক বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। বেড়েছে ডাকাতির ঘটনাও। গ্রিলকেটে বা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেয় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এ সময় গৃহবধূদের ধর্ষণ করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আশঙ্কাজনকভাবে উপজেলা জুড়ে চোর-ডাকাতের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি থানার অদুরে পৌর শহরের হাজী পাড়া এলাকায় শাহবুদ্দিন মৃধার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ আড়াই লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামে আবুল হোসেনের বাড়ি ডাকাতি হয়। ডাকাতের দল আবুল হোসেনের ছেলে আনিচুর রহমানকে কুপিয়ে জখম করে। লুট করে নিয়ে যায় ২ লাখ টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার। কাছিপাড়া কলেজ সংলগ্ন এক ভবনের দুইটি বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দুই পরিবারের নগদ টাকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মামামাল লুট করে নেয়।

উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বাসার মেইন গেটের তালা ও সদর দরজা ভেঙে এসব ডাকাতি সংঘটিত হয়।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে কর্পূরকাঠী গ্রামে. শহিদুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শহিদুল ঢাকার সাভারে চাকরি করেন। বাড়িতে তার স্ত্রী, মা ও দুই সন্তানের হাতপা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে। এ সময় তাদের মারধর করা হয়। লুট করে নেয় এক ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩০ হাজার টাকা। একই রাতে বগী গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বাসার দরজা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে।

১৫ সেপ্টেম্বর ওই ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কালাইয়া গ্রামে মো. ইলিয়াস নামের এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ডাকাতরা গৃহবধূ, তার শাশুড়ি ও সন্তানকে বেধে ফেলেন। রাতভর গৃহবধূকে নির্যাতন করে ডাকাত সদস্যরা। লুট করে নেয় তিনভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১০ লাখ টাকা।

গত ৭ আগস্ট ইউনিয়নের কর্পূরকাঠি গ্রামে নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নজরুল ইসলাম ঢাকাতে থাকেন। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে ডাকাত সদস্যরা। স্ত্রী ও সন্তানদের মুখ বেধে গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নেয় ৭ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও নগদ ১ লাখ টাকা।

গত ২৮ আগস্ট রাতে ওই একই ইউনিয়নের পূর্ব কালাইয়া গ্রামে এক স্কুল শিক্ষিকার ঘরে ডাকাতি হয়। মা ও মেয়ের হাত পা বেঁধে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও সম্প্রতি উপজেলার বগা বন্দরে জননী জুয়েলার্সে, পৌর শহরে বকুলতলা শহরে সালাম মুন্সির মুদি দোকান, নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবদ বাজারে এক রাতে ৮টি দোকান ঘর, কুচয়া গ্রামের শারিফ তালুকদারের খামার থেকে দুইটি উন্নত জাতের গরু, কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ৫টি গরু, উত্তর মমিনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আ. খালেক হাওলাদারের ৪টি গরু, শহিদুল হাওলাদারের ৪টি গরু, কনকদিয়া ইউনিয়নের বীরপাশা গ্রামের ইউনুচ খানের ২টি গরু, কালাইয়া ইউনিয়নে একাধিক ব্যক্তির ১৫টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিরাতেই উপজেলায় ঘটছে চুরি ডাকাতির ঘটনা।

ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন মহল জানান, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুককেরা এসব চুরি ডাকাতি সংঘঠিত করছেন। এলাকার মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়িরা এসব চুরি ডাকাতির সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ করছেন। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সম্পৃক্ত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দায় এড়িয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি।

উপজেলায় চুরি ডাকাতি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে বাউফল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন, চুরি ডাকাতিসহ সকল অপরাধ নির্মূলে পুলিশ কাজ করছেন। তবে একা পুলিশের পক্ষে এসব সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চুরি ডাকাতি ঠেকাতে বাজারগুলোতে পাহারাদার বসানো প্রয়োজন। যা অধিকাংশ বাজারে নেই। এছাড়াও সমাজের সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধিদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তেমনটাও চোখে পড়ে না। তারপরেও পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App