×

সারাদেশ

আবারও মাঠে নামছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২১ পিএম

আবারও মাঠে নামছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম

আবারও মাঠে নামছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে আবারো মাঠে নামছে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিতর্কিত সংগঠন হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলাম। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে সারাদেশে নাশকতা-তাণ্ডবের চালানোর দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি ও দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া না হলে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে হুমকি দিয়েছে দেশব্যাপী নাশকতা-তাণ্ডবের হোতা হেফাজতে ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিতর্কিত সংগঠনটির আমীর মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, জেলে বন্দি সকল আলেম-ওলামাকে মুক্তি দিন। তাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে পুনরায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় কোন কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ২০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় এবং ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের তিন সপ্তাহ পর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠক আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হেফাজতের অবস্থান শক্তিশালী করতে সংগঠন পুনর্গঠন করা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার চাপ রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। বৈঠক থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হয়। পাশাপাশি দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করে প্রত্যেক জেলায় শানে রেসালত সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামানোর জন্য সংগঠনের ভেতরে একটি পক্ষ বরাবরই সরব। অন্য পক্ষটি আন্দোলনের বিপক্ষে। নির্বাচনের আগে আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও দোটানায়।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব জাকারিয়া নোমান বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের এখনো কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। মামলা প্রত্যাহার এবং কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্যসহ নানা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হেফাজতে ইসলাম নামে সাম্প্রদায়িক সংগঠনটি। দেশব্যাপী হেফাজতের নাশকতা-তাণ্ডব-রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং হেফাজত নেতাদের নারী- অর্থ কেলেংকারিসহ নানা অভিযোগ রযেছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা ইন্ধন-মদদে দেশব্যাপী নাশকতা-তাণ্ডবের মামলায় অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে।

মহিবুল্লাহ বাবুনগরী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নাস্তিক্যবাদী শক্তি যদি মাথাচাড়া দেয় এবং কুরআন, আল্লাহ, রাসূল, উম্মাহাতুল মুমিনিন, আসহাবে রাসূল সা. এর শানে কটূক্তি ও ঘৃণা প্রচার করে এবং ইসলামবিদ্বেষ ছড়ায়, আর এতে সরকার যদি কোন অ্যাকশন না নেয়, অথবা সরকার যদি নিজের পক্ষ থেকে এমন কোন পদক্ষেপ নেয় যা ইসলামী শরীয়াহ পরিপন্থী তাহলে ঈমানের তাগিদে আমরা তার প্রতিবাদ করব এবং প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

২০১০ সালে হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সূচনালগ্ন থেকে আহমদ শফী সংগঠনটির আমির এবং জুনায়েদ বাবুনগরী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধারপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনকারীদের নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে সরব হয় হেফাজত। একপর্যায়ে ১৩ দফা নিয়ে ওই বছরের ৫ মে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করে। ঢাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক নাশকতা-তাণ্ডব চালায় হেফাজত।

আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫১ সদস্যের হেফাজতের নতুন কমিটি হয়। এই কমিটিতে থাকা যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতারা প্রথম থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় সভায়, ওয়াজ মাহফিলে সরকার, মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে থাকেন। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হাটহাজারীতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ব্যাপক নাশকতা-তাণ্ডব চালায়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতের নেতাকর্মীরা কয়েকদিন ধরে তাণ্ডব চালিয়ে থানায় ভাঙচুর, ভূমি অফিসসহ সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App