×

সারাদেশ

মাদ্রাসাছাত্রকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা, শিক্ষক গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম

মাদ্রাসাছাত্রকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা, শিক্ষক গ্রেপ্তার

নগরীর মেহেদীবাগে একটি মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী শাবিব শাইয়ানকে (১১) সেই মাদ্রাসারই শিক্ষক রিদুয়ানুল হক যৌন নিপীড়ন ও শ্বাসরোধ করে খুন করে। খুনের পর ওই কোমলমতি শিশু আত্মহত্যা করেছে এটি প্রমান করার জন্য তার প্যান্টের বেল্ট দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে বাথরুমে ঝুলিয়ে রেখেছিল।

এ বছর ১৩ মার্চ নগরীর চকবাজার থানাধীন মেহেদীবাগে একটি মাদ্রাসায় এ পাশবিক ও নির্মম ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনাটিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সন্তানহারা পিতার মামলা ও মেডিকেল রিপোর্টে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নোংরা ও বিকৃত চরিত্র বের হয়ে আসে।

চাঞ্চল্যকর ও নির্মম এই ঘটনার মূল আসামী রিদুয়ানুল হক (৩২) সেই নির্মম হত্যাকান্ডের প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় পর র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. নূরুল আবছার জানিয়েছেন তাকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন বমুবিলছড়ি এলাকা থেকে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি চকরিয়া থানাধীন পূর্ব চরণদ্বীপ গ্রামের জনৈক বদিউল আলমের পুত্র।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যাকান্ডের ঘটনাকে প্রাথমিক পর্যায়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও পরবর্তীতে ওই শিশুর মরদেহের ময়না তদন্তে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের প্রমান পাওয়া যায় এবং অনৈতিকভাবে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আলামত পাওয়া গেছে। আসামী রিদুয়ানুল হককে গ্রেপ্তারের পর সেখানে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে এই পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, শাবিব শাইয়ান (১১) চট্টগ্রামের চকবাজার থানাধীন মেহেদীবাগস্থ একটি মাদ্রসার হেফ্জ বিভাগের ছাত্র ছিল। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৩ মার্চ সকাল ৬ টার দিকে শাবিব শাইয়ান’কে তার বাবা মশিউর রহমান চৌধুরী বাসা থেকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক নয়টার দিকে ছেলেকে মাদ্রাসা থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসার গেইটের সামনে উপস্থিত হলে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. ফোরকান মোবাইল ফোনে জানায় তার ছেলে মাদ্রাসার ৪র্থ তলায় অবস্থিত বাথরুমে গিয়েছে। বাথরুম থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় মাদ্রাসার অন্যান্য শিশু শিক্ষার্থীরা শাবিব শাইয়ান’কে অনেক ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে মাদ্রাসায় উপস্থিত শিক্ষকদেরকে জানায়। এরপর শিক্ষক রিদুয়ানুল হক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান ভিকটিম শাবিব শাইয়ান তার পরিহিত প্যান্টের বেল্ট গলায় দিয়ে বাথরুমের টাওয়াল স্ট্যান্ড এর সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।

তখন শিক্ষার্থীরা ভিকটিম শাবিব শাইয়ানের মুমূর্ষ অবস্থার কথা তার বাবা মশিউর রহমান চৌধুরীকে জানায়। খবর পেয়ে মশিউর রহমান চৌধুরী দ্রুত মাদ্রাসার ৪র্থ তলায় ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষক রিদুয়ানুল হক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় শাবিব শাইয়ান’কে ঝুলন্ত অবস্থা হতে উদ্ধার করে নিকটস্থ মাক্স হাসপাতাল নিয়ে যায়। হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু ভিকটিম শাবিব শাইয়ান’কে মৃত ঘোষণা করেন। উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডটি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এই নির্মম ও নৃশংস হত্যার ঘটনায় গত ১৬ মার্চ নিহত ভিকটিমের পিতা মশিউর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানায় ৩ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় পুলিশ ২ আসামীকে আটক করলেও এই নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ও মামলার প্রধান আসামী রিদুয়ানুল হক (৩২) কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলাটি নিয়ে র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তারা তদন্তকালে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন বমুবিলছড়ি এলাকায় অবস্থানের বিষয়টি মিশ্চিত করে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মো. নূরুল আবছার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App