নোয়াখালীর মাইজদীতে জেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে গণপূর্ত বিভাগের শতকোটি টাকার সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণের কাজ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ কাজ বাস্তবায়নে তদারকি করছে নোয়াখালী ক্ষুদ্র হকার্স সমবায় সমিতি লিমেটেডের সভাপতি একরাম উল্যাহ ডিপটি।

এছাড়া শহরের বড় মসজিদ সড়কে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পূর্ব পাশ, নোয়াখালী সুপার মাকেটের পূর্ব পাশে নানা কায়দায় দখল করা হয়েছে গণপূর্ত বিভাগের সরকারি জায়গা।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিন জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কের পূর্ব পাশ ও নোয়াখালী সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশের গণপূর্ত বিভাগের সরকারি জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের নামে ওই জায়গা দখল করে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় অবৈধ মার্কেট নির্মাণের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যামাণ আদালতের একটি দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। তাদের দেখে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ওই সময় নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তারা চলে আসার পর পুনরায় গত দুদিন চলছে নির্মাণ কাজ।

প্রশাসনের কোনো অনুমতি না নিয়ে জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে গণপূর্তের খালি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে প্রকাশ্যে দিবালোকে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। অথচ সকাল-সন্ধ্যা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ওই স্থান দিয়ে চলাচল করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব সরকারি জায়গা দখল করা হচ্ছে। এরআগেও শহরের বড় মসজিদ সড়কে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য ভবনের একটু পূর্ব পাশে করা হয় একটি গোডাউন। যা কাজ শেষ হলে সরিয়ে ফেলার কথা থাকলেও না সরিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। একইভাবে দখল করা হয়েছে নোয়াখালী সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশের খালি জায়গায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট দিয়ে ওই জায়গাও দখল করে নেওয়া হয়েছে।

এইসব সরকারি জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা দেখেননি শহরবাসী। দখল করে নেওয়া হচ্ছে শহরের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে আমানিয়া হোটেল থেকে পৌর বাজার আলিফ রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত মার্কেটের পিছনের সরকারি খালি জায়গা। প্রশাসন এসব দেখেও যেন না দেখার ভূমিকা পালন করছে।

নোয়াখালী ক্ষুদ্র হকার্স সমবায় সমিতি লিমেটেডের সভাপতি একরাম উল্যাহ ডিপটি সাংবাদিকদের বলেন, এ কাজ আমি তদারকি করছি সত্য। প্রেসক্লাবে বসে সবাইকে জানিয়েছি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু ভাইসহ বসে সকল সাংবাদিককে অবহিত করা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনি চেয়ারম্যান আর মেয়রের সাথে কথা বলেন।

নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, সেখানে গণপূর্তের ৬৫ শতক জায়গা রয়েছে। গত সোমবার এ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তারা পুনরায় বন্ধের দিনে কাজ করছে। আমাদের তো সব সময় সেখানে বসে থাকা সম্ভব না। তবে এ অবৈধ স্থাপনা গুটিয়ে দেয়া হবে।

নোয়াখালী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, গতকালকে আমরা প্রেসক্লাবে সবার সাথে বসেছি। এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এটা কোনো জবর দখল নয়। এটা গণপূর্তও দেয়নি, জেলা প্রশাসনও দেয়নি। তারা আপাতত কয়েক মাসের জন্য সেখানে ব্যবসাটা করবে। তারপর তারা আবার তাদের নিজের জায়গায় চলে যাবে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, কাজের শুরুতে সেখানে বাধা দেয়া হয়েছে। কাজ করলে পুনরায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।