×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে প্রশাসনের ওপর হামলা: ইউএনও-ওসিসহ আহত ১০

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম

চট্টগ্রামে প্রশাসনের ওপর হামলা: ইউএনও-ওসিসহ আহত ১০

চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় অভিযানে অংশগ্রহনকারি ভ্রাম্যমান টিমের সদস্যদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাসী-ভূমিদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযানের শেষ পর্যায়ে প্রশাসনের উপর হামলা চালিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সীতাকুন্ড থানার ওসি’সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে তিন হামলাকারীকে।

প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে গত বছর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি খাস দশ একর জমি উদ্ধার করে হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রশাসন সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টানিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে দখলদাররা আবারও উদ্ধারকৃত জমি দখল করে নেয়।

পূর্বে উদ্ধারকৃত জমি বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পুনরুদ্ধার করতে প্রশাসন আবারও অভিযান চালায়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসন, র‌্যাব, এপিবিএন, পুলিশ ও আনসারের ২৫০ সদস্য অংশ নেয়। অভিযানের শেষ পর্যায়ে বিকেলে চারটার দিকে হঠাৎ কয়েকশ’ নারী-পুরুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে প্রশাসনের উপর অতর্কিতভাবে বৃষ্টির মত পাথর ছুঁড়তে থাকে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, অভিযান শেষ করে ফেরার পথে হঠাৎ কয়েকশ নারী-পুরুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অতর্কিতভাবে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমিসহ বেশ কয়েকজন আহত হই। অতর্কিত ছোড়া পাথর আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এসে পড়ে। আহতরা ভাটিয়ারির বিএসবিএ হাসপাতাল ও সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

সীতাকুন্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. আলাউদ্দিন বলেন, অভিযান শেষ করে ফেরার পথে অতর্কিতভাবে পাহাড়ের আড়াল থেকে কয়েকজন নারী পুরুষ পাথর ছুঁড়তে থাকে। এতে ইউএনও স্যারসহ কয়েকজন আহত হন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ আগস্ট সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়।

অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন। পরে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার কয়েকশ’ অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ৪০০ পরিবারের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে সেখানে অবৈধ দখলদারদের কবলে থাকা ৭’শ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসনের ওপর হামলা চালায় অবৈধ দখলদাররা। এ সময় তারা ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।

প্রসঙ্গত, সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত সীতাকুন্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ে পাঁচটি মৌজায় প্রায় ৩১০০ একর সরকারি খাসজমি আছে। যেখানে সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছিল বিশাল অপরাধের সাম্রাজ্য। বছরের পর বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে ভূমিদস্যু-সন্ত্রাসীরা প্রায় ৪০০ একর পাহাড় ন্যাড়া করে গড়ে তুলেছিল বিশাল এই সাম্রাজ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে অপরাধীরা আস্তানা গাড়তো এখানে। ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন সেই খাসজমি দখল করে প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে ও জঙ্গল সাফ করে প্লট বিক্রি করে আসছিল।

স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। এ রাজ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশও অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত এই জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকারি খাসজমিগুলো উদ্ধার করে সেখানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেখানে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে নাইট সাফারি পার্ক, স্পোর্টস ভিলেজসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App