×

সারাদেশ

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় রয়েছে একটি বড় কাঁচাবাজার। এ বাজার থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম রাজশাহী বরিশাল ফরিদপুরসহ দূরত্ব মাত্র শত-শত কিলোমিটার। অথচ ওই বাজার থেকে সবজি হাতবদলে দুই-তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুলনা নগরীতে দূরত্ব খুব বেশি না হলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

শুক্রবার ওই পাইকারী কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি কাঁচা ঝাল মরিচ প্রতিকেজি ৯০ টাকা, বেগুন-৬০ টাকা, ঝিঙে- ২৪ টাকা, ধুন্দল ১২ টাকা, পেঁপে ১০ টাকা, লাউ ১৫ টাকা, কুশি ২৬ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, বরবটি ৪৫ টাকা, শসা ২২ টাকা, ঢেঁড়শ ২৫ টাকা, করোলা ৩৭ টাকা, কুমড়ার জালি (প্রতি পিস) ১৬ টাকা ও শিম প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ বাজার থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট, বরিশাল, পটুয়াখালি ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ২০ ট্রাক শাক-সবজি সরবারহ হয়।

পাইকারি এই কাঁচা বাজার থেকে মাত্র ১৬-১৭ কিলোমিটার দূরে বিভাগীয় শহর খুলনা। খুলনার নিউ মার্কেট (প্রান্তিক বাজার)-এ একই দিন বিকেলে দেশি কাঁচা ঝাল মরিচ ১২০ টাকা দরে, বেগুন-৯০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, পেঁপে ৪৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, কুশি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, করোলা ৮০ টাকা, কুমড়ার জালি (প্রতি পিস) ৪০ টাকা ও শিম প্রতিকেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু নিউ মার্কেট (প্রান্তিক বাজার) নয় রুপসা বাজার, শেখ পাড়া বাজার, গল্লামারী বাজার, কেসিসি সান্ধ্য বাজারসহ ৫-৬টি বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়।

প্রান্তিক বাজারে সবজি কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুসলমান পাড়ার বাসিন্দা আল কাফি। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ পাইকারি বাজারে এসব সবজির দাম ২ থেকে ৩ গুণ কম। এতে করে কৃষককে ঠকানো হচ্ছে। মাঝখান থেকে সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি মনিটরিং করার দাবি জানাচ্ছি।

প্রান্তিক বাজারে খুচরা সবজি বিক্রেতাওহিদুজ্জান জানান, এবার সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ কম। এছাড়া দোকানঘর ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি রয়েছে। সেকারণেই মূলত দাম একটু বেশি।

ডুমুরিয়ার বিশ্বাস ও আলামিন কাঁচা বাজারের আড়তদাররা বলেন, কৃষকেরা তাদের সবজি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা সবজি সংগ্রহ করেন। পরে পাইকাররা সেই সবজি বিভিন্ন হাটবাজারের আড়তে বিক্রি করেন। আড়ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা তা কিনে নিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক দফা হাতবদলের কারণে সবজির দাম দুই-তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। তবে ডুমুরিয়া বড় পাইকারি কাঁচা বাজার থেকে খুলনা শহরে খুচরা বাজারে একবার হাতবদলে দুই-তিন গুণ দামে বিক্রি অস্বাভাবিক বলে তারা মনে করেন।

সবজি উৎপাদনে জড়িত কৃষকেরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার, বীজ, কীটনাশকসহ সবকিছুর দাম বাড়ায় সবজি উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। খেত থেকে সবজি তুলে পাইকারি বাজারে বিক্রি করে তারা যে দাম পাচ্ছেন, তাতে কোনোরকমে উৎপাদন খরচ উঠছে। আর খুচরা বাজারে সেই সবজি দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, খুলনা লাগোয়া ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ডুমুরিয়া উপজেলা। সারা বছরই সবজির আবাদ হয় এই উপজেলায়। তবে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয় শীতকালে। সারা বছর মিলে অন্তত দুই লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। সে কারণে এই উপজেলাকে শস্য ভাণ্ডার বলা হয়। এছাড়া ভালো সবজি উৎপাদনের কারণে ডুমুরিয়া সদর, খর্ণিয়া, শাহাপুর, চুকনগর, আঠারমাইলসহ বেশ কিছু স্থানে বড় বড় পাইকারি কাঁচা বাজার গড়ে ওঠেছে।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, দুই-তিনগুণ দাম আসলে অস্বাভাবিক। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App