×

সারাদেশ

পরিত্যক্ত জুট মিল এখন জ্ঞানের পাঠশালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২২ পিএম

পরিত্যক্ত জুট মিল এখন জ্ঞানের পাঠশালা
বছর খানেক আগেও পরিত্যক্ত জুট মিল ছিল আবর্জনা আর ঝোপ-ঝাড়ে ভরা। দুর্গন্ধে এর ভেতরে যেত না কেউ, ছিল মাদকসেবীর আখড়া। এখন সেখানে কজন স্বপ্নবাজ তরুণের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে পাঠাগারভিত্তিক সংগঠন ‘প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র’। যেখান থেকে বই ও পত্রিকা পড়ে জ্ঞান অর্জন করছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সেই সঙ্গে ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা করছে কিশোর-তরুণেরা। এই সংগঠনটির অবস্থান রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর বাজারে। ২০২০ সালের ১ আগস্ট প্রায় এক হাজার বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে অন্নদানগর বাজারের মসজিদ মোড়ে পরিত্যক্ত জুট মিলের গুদামঘরে চলছে এর কার্যক্রম। বাইরে থেকে দেখতে ঘরটি অনেক পুরোনো ও জরাজীর্ণ মনে হলেও ভেতরে চলছে নিবিড় জ্ঞানচর্চা। প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্র নাটকসমগ্র, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদাসমগ্র, সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাবলিসহ পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাময়িকীসহ প্রায় এক হাজার বই। প্রতিদিন রাখা হয় দৈনিক পত্রিকা। শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন। সব মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা হাজারের অধিক। কেন্দ্রের দপ্তর সম্পাদক নয়ন চন্দ্র বর্মণ জানান, সম্পূর্ণ বিনা খরচে পাঠক এখানে বই ও ম্যাগাজিন পড়তে পারে। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে কেন্দ্রের পাঠাগার। পাঠক সুবোধ চন্দ্র বর্মণ পেশায় দর্জি। তিনি বলেন, সামান্য পড়াশোনা করেছি। ব্যবসা আর জীবন সংসারের ভিড়ে পড়াশোনা আর করা হয়নি। এখন এই পাঠাগারে নিয়মিত আসি। বই ও পত্রিকা পড়ি। এতে জ্ঞানের চর্চা হচ্ছে। অনেক কিছু জানতে পারছি। উপদেষ্টা মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার উন্মেষ ঘটাচ্ছে প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র। বইপাঠ, সংগীত প্রশিক্ষণ, খেলাধুলাসহ নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সংগঠনটি। আমাদের সকলের সহযোগিতা পেলে এটি আরো এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা পরিচালক কবি ও সমাজকর্মী মীর রবি বলেন, ‘আমরা এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই। এজন্য আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করতে প্রতি সপ্তাহে পাঠচক্র, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বইপাঠ প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রিক রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, সাহিত্য আসর, সেমিনার, সংগীত প্রশিক্ষণ, ক্রিড়া চর্চাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজে জ্ঞানচর্চার বিস্তারে প্রচারণা অব্যহত রেখেছি। আমরা মূলত এটিকে সমাজ-সংস্কৃতির চর্চা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ কেন্দ্রের সভাপতি তাপস কুমার সাহা বলেন, পরিত্যক্ত জুট মিলে পাঠাগার গড়ে তোলা হয়েছে। নানা সময়ে এটি পরিদর্শন করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রশিল্পী পাভেল রহমান, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, জাতীয় পরিবেশ পদকজয়ী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, কথাসাহিত্যিক পলাশ মজুমদারসহ অনেক বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা আমাদের সাহস জুগিয়েছেন। নানা রকম সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা সামাজিক কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমাদের স্থায়ী জমি ও ভবনের বন্দবস্ত করে দিলে আমরা এর মাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App