×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে মশা নিধনে ফগার মেশিনের শব্দ-ধোঁয়াতেই সীমাবদ্ধ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম

চট্টগ্রামে মশা নিধনে ফগার মেশিনের শব্দ-ধোঁয়াতেই সীমাবদ্ধ!

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের মশক নিধন কর্মীরা এভাবে মাঝে মধ্যে বিকট শব্দে ফগার মেশিনের ধোঁয়া ছেড়ে লোক দেখানো মশক নিধন কর্মসূচি পালন করেন মাত্র। ছবিটি কয়েকদিন আগে নগরীর মোমিন রোড এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ, চট্টগ্রাম অফিস।

চট্টগ্রামে মশা নিধনে ফগার মেশিনের শব্দ-ধোঁয়াতেই সীমাবদ্ধ!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় এভাবে পানি জমে গড়ে উঠেছে মশার প্রজনন কেন্দ্র। রবিবার দুপুরে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ, চট্টগ্রাম অফিস।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও প্রাণহানির ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। কিন্তু মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসসহ মশা মারতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাঝে মধ্যে শুধু ফগার মেশিন দিয়ে বিকট শব্দে ধোঁয়া দিতেই দেখা যায়। এছাড়া নালা নর্দমাসহ অন্যান্য প্রজননক্ষেত্রগুলো পরিষ্কার করার জন্য তেমন কোন উদ্যোগই চোখে পড়ে না। নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় পানি জমে মশার প্রজনন বাড়ছেই। তার ওপর বৃষ্টিতে নানা জায়গায় পানি জমে থাকাতে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলররাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি তেমনভাবে গুরুত্ব না দেয়াতে নগরী মূলত: অপরিচ্ছন্নই হয়ে উঠছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও ডেঙ্গু মশার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে যে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে অপরিচ্ছন্ন নালা-নর্দমা ও বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশাসহ সব ধরনের মশার প্রজনন বেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে মশার প্রজনন কেন্দ্র। যে হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিতে যাবেন সেখানেই যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে নগরীর অন্যান্য অন্যান্য স্থানের পরিস্থিতি কি তা সহজেই বোঝা যায়।

এদিকে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যু এবং নতুন করে ১২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫৪ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪ পুরুষ ও ১৯ মহিলা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

মারা যাওয়া নারী ঝর্ণা রাণীর (৪৩) বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলায়। জানা গেছে, ডেঙ্গু এনএস-১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ওই নারীকে গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু ঘটে। তিনি এনএস-১ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন এবং এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে তার মৃত্যু ঘটে।

[caption id="attachment_461478" align="aligncenter" width="1369"]চট্টগ্রামে মশক নিধন ফগার মেশিনের শব্দ-ধোঁয়াতেই সীমাবদ্ধ! চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্কিং এলাকায় এভাবে পানি জমে গড়ে উঠেছে মশার প্রজনন কেন্দ্র। রবিবার দুপুরে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ, চট্টগ্রাম অফিস।[/caption]

চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন ১২৯ রোগী। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৭৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫২ জন। সরকারি হাসপাতালের ৭৭ রোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৯, জেনারেল হাসপাতালে ৯, বিআইটিআইডিতে ১৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে ৪ ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন। ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৩৫ জনে।

এদের ৩ হাজার ৫৯৫ জন সরকারি হাসপাতালে এবং ২ হাজার ৫৪০ জন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩২৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৮০৬ জন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেছেন , চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে সকলকে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার মশক নিধনের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ করেছে। কিন্তু তা নামেই ক্রাশ প্রোগ্রাম রয়ে গেছে। মশা কমাতো দূরের কথা মশার তীব্র দংশন ও ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী সন্ত্রস্ত। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। কারণ নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে। চট্টগ্রাম নগরীতে সম্ভবত: হেন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল নেই যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্সার্থী নেই। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠিয়েও শংকার মধ্যে থাকেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App