×

সারাদেশ

মধ্যপাড়া পাথরখনির উৎপাদন বন্ধের আশংকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৭ পিএম

মধ্যপাড়া পাথরখনির উৎপাদন বন্ধের আশংকা

মধ্যপাড়া পাথরখনির উৎপাদন বন্ধের আশংকা। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ ও উৎপাদন ঠিকাদার জিটিসির মাঝে প্রাইস এডজাস্টমেন্ট নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়ায় পুরোদমে পাথর উৎপাদন করেও জিটিসি শতভাগ বিল পাচ্ছে না। খনি কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ঠিকাদারের প্রতিমাসের উৎপাদন ও আনুসাঙ্গিক খরচের বিলের ৭৫ শতাংশ দিচ্ছে। প্রতিমাসে ২৫ শতাংশ বিল কম দেয়ায় জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাসে জিটিসি’র পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। চলতি আগস্ট মাসের বিলও সম্পূর্ণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরফলে জিটিসির পাওনার পরিমাণ বেড়ে হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়ে জিটিসি সাত শতাধিক দেশী খনি শ্রমিক-কর্মচারী এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীসহ প্রায় একশ বিদেশীকে প্রতিমাসে বেতনভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হচ্ছে। দ্রুত এ অবস্থার অবসান করা না গেলে খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

তবে খুব শিগগির প্রাইস এডজাস্টমেন্ট (মূল্য সমন্বয়) করে জিটিসি’র বকেয়া পাওনাসহ নিয়োমিত বিল পরিশোধ করা হবে বলে খনি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

জানা গেছে, গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর উৎপাদন করেছে জিটিসি। এ সময়ের মধ্যে উৎপাদন বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ জিটিসি’র নিট পাওনা (ভ্যাট ও আয়কর বাদে) প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রদান করা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিমাসে পাওনা ২৯ কোটি টাকার বিপরীতে প্রদান করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ কম দেওয়া হয়েছে যা প্রদত্ত বিলের ২৫ শতাংশ। এতে করে জুলাই পর্যন্ত জিটিসি’র নিট পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। এর সাথে আগস্ট মাসের বিল যোগ হয়ে নিট পাওনা দাঁড়াবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। প্রাইস এডজাস্টমেন্ট না হওয়ায় খনি কর্তৃপক্ষ এভাবে জিটিসির টাকা আটকে রেখেছে।

সুত্রমতে, চুক্তি অনুযায়ী খনি উন্নয়ন ও প্রতিটন পাথর উৎপাদনের বিপরীতে জিটিসি পাবে প্রায় ১২ ডলার। এরসাথে স্পেয়ার পার্স (যন্ত্রাংশ) খাতে ৩ ডলারসহ আনুসাঙ্গিক খরচের জন্য পাবে ৫ ডলার।

এছাড়া, জিনিসপত্রের দাম বাড়া-কমার বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন চুক্তিতে “প্রাইস এডজাস্টমেন্ট” (মূল্য সমন্বয়) অবসন রাখা হয়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে বা কমলে চুক্তিমূল্য সমন্বয় করা যাবে। চুক্তির এক বছর পর প্রাইস এডজাস্টমেন্ট কার্যকর হবে। জিটিসি’র সাথে দ্বিতীয় দফা ছয় বছরের চুক্তি কার্যকর হয় ২০২১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর। সে হিসেবে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রাইস এডজাস্টমেন্ট কার্যকর হয় কথা। কিন্তু পাথর উৎপাদনের অন্যতম উপাদান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও এক্সফোসিভ (বিস্ফোরক) সংকটে দুই দফায় ১৯১ দিন খনির উৎপাদন বন্ধ থাকায় চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রাইস এডজাস্টমেন্ট কার্যকর হয়। এসময় থেকেই প্রাইস এডজাস্টমেন্ট নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষের সাথে জিটিসি’র মতবিরোধ চলে আসছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে খনি কর্তৃপক্ষ ও জিটিসি দফায় দফায় বৈঠক করে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে। এজন্য আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে খনি সুত্র জানায়।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান গত বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে মোবাইল ফোনে ভোরের কাগজকে জানান- চুক্তিপত্রে প্রাইস এডজাস্টমেন্ট বিষয়ে কিছু অস্পস্টতা থাকায় জিটিসি প্রদত্ত বিলের ২৫ শতাংশ কেটে রেখে বিল প্রদান করা হচ্ছে। তবে উভয়পক্ষ আলাপ আলোচনা করে সমঝোতা হয়েছে। খুব শিগগির একটি সাইট লেটার এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হবে। এরপর জিটিসিকে বকেয়া পাওনাসহ নিয়োমিত বিল পরিশোধ করা হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রনাবেণের দায়িত্ব দেয়া হয় জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। জিটিসির হাত ধরে খনিটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মত লাভের মুখ দেখে। পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় টানা পাঁচ অর্থবছর ধরে মুনাফা করে আসছে খনিটি। জিটিসির প্রথমদফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। ২০২১ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিমূল্য ১৫০.০৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা)। এরমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় ১১৮.৫৯৯ মিলিয়ন ডলার এবং স্থানীয় মুদ্রায় ৩১.৪৪৪ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৬ বছরে ভূ-গর্ভে নতুন ১৪টি স্টোপ (উৎপাদন ইউনিট) উন্নয়নসহ ৮৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে দিবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App