×

সারাদেশ

আলফাডাঙ্গায় পাটের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১২ পিএম

আলফাডাঙ্গায় পাটের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ছবি: কবীর হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হলেও পাটের দাম নিয়ে হতাশ হয়েছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তবে বর্ষার ভরপুর মৌসুম হওয়ায় প্রয়োজন মত বৃষ্টির পানি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষিরা। পাটের বীজ বপণ থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা পর্যন্ত যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান বাজারদরে পাট বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে কৃষকদের। এমনটাই আশঙ্কা করছেন উপজেলার সাধারণ কৃষকরা।

অনেক স্থানে পাটের আঁশ ছড়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে এর মধ্যে হঠাৎ করেই এ বছর গত পাটের বাজার মূল্য উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। পাটের ফলন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে দাম ছিল মণ প্রতি ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা । বর্তমানে এ সপ্তাহে পাটের বাজারধর কমে ১ হাজার ৬শ থেকে ১ হাজার ৮শ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, উপজেলার ফলিয়া গ্রামের পাট ব্যবসায়ী আবুল কাশেম মন্ডল বলেন, বর্তমানে মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ টাকা। তবে আরও উন্নত পাট বেশি দামে কিনা যেতে পারে।

তিনি জানান, বাজার অনুযায়ী পাটের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলার বানা ইউনিয়নের আরপাড়া গ্রামের কৃষক সাকাওয়াৎ হোসেন বলেন, পাট ঘরে তুলতে যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান দাম অনুযায়ী বিক্রি করলে খরচ ওঠানো যাচ্ছে না। লোকসানে পড়তে হচ্ছে। কষ্টটাই বৃথা যায়। বাজারে দাম কমে গেলে আমাদের মতো কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা ফসল ঘরে তুলে মজুদ করতে পারি না। টাকার জন্য বিক্রি করতেই হয়।

পাচুড়িয়া ইউনিয়নের ধুলজুড়ি গ্রামের মো. শহীদুল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক বলেন, শুনছি সামনে আরও কমবে পাটের দাম।

তিনি আরও বলেন, দাম কমতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের পাটচাষি এনামুল হক রুবেল বলেন, এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। মজুদ করার মতো জায়গাও নেই আমার। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের একটা অংশ পাট বিক্রি করছেন। তারা জানিয়েছেন, টাকা খরচ করে আবাদ করেছেন। পাট বিক্রি করে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করবেন। কেউ ঋণ করেছেন। এসব চাহিদা মেটানো এবং আগামী ফসলের জন্য জমি প্রস্তত করতে পাট বিক্রি করতেই হচ্ছে তাদের।

তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম কম পেয়ে মজুদ করতে পাট কিনছেন বলেও জানা গেছে। দাম বাড়লে তখন বিক্রি করবেন তারা। উপজেলার অনেক স্থানেই পাট তুলে জমিতে ধানের চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা। উঁচু স্থানের জমির পাট কেটে জাগ দেয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে।

উপজেলার শিরগ্রাম বাজারের পাট ব্যবসায়ী আদাদুজ্জামান আহাদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পাটের দাম কমতে শুরু করেছে। আগে যে পাট ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন সেই পাট ১ হাজার ৬শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মনে হচ্ছে দাম আরও কমতে পারে।

উপ সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. রেজওয়ান ইসলাম জানান, এ উপজেলা ২৫৮৫ জন কৃষকের মধ্যে প্রতিজনকে ১ কেজি করে পাট বীজ ও সাড়ে ৯ কেজি করে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেছে, এ উপজেলার এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।

জানতে চাইলে আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আবাদ হয়েছে। এ উপজেলা পাট চাষের জন্য আবহাওয়া যথেষ্ট উপযোগী। এ কারণে প্রতি বছরই এখানে পাটের ফলন ভালো হয়। চলতি বছরও ভালো ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজারে পাটের দাম কিছুটা কম। তবে পাটের দাম বাড়লে কৃষকরা সন্তুষ্ট হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App