×

সারাদেশ

বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৫ এএম

বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি
উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে আবারো বাড়ছে নদনদীর পানি। এরমধ্যে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গতকাল শনিবার কুড়িগ্রামে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার, নীলফামারীতে ১০ সেন্টিমিটার ও লালমনিরহাটে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট- তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদী সমূহের পানি ফের বাড়ছে। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর পানি ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বিপদসীমার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে গোটা জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় রোপা আমন ক্ষেতসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তিস্তা তীরবর্তী থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই একটি জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও টেক্সটাইল ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও অধিকাংশ এলাকায় ভাঙন রোধে পাউবোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, হাতিয়া ইউনিয়নের একাংশ ও চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, অষ্টমীর চর, রানীগঞ্জ ও রমনা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বাপাউবোর তথ্য অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে, তিস্তা নদীর পানি একই সময়ে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মতে উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এসব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এরকম পরিস্থিতিতে বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। নদনদীর পানি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে নিচু এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের দুর্ভোগ ততই বাড়ছে। গত দুদিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় নিম্নাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের আসাম ও অরুণাচলে ভারি বৃষ্টির কারণে ও স্থানীয় বৃষ্টিপাতে নদনদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বিপদসীমায় আসতে পারে। এ অবস্থায় জেলার কয়েকটি উপজেলায় নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ সম্ভাব্য বন্যার ব্যাপারে বলেন, আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি, আমাদের হাতে খাদ্যসামগ্রীসহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। মো. রাজীব হুসাইন রাজু, নীলফামারী থেকে : তিস্তা নদীর পানি ফের বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত দুদিনের ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে সকাল ৬টা ও ৯টায় তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৫২ দশমিক ২৫ ও ৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষজন আবারো বন্যার আশঙ্কা করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে ফের বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে চরাঞ্চলে বানের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বৃষ্টির পানি অব্যাহত থাকলে আবারো বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বপন কুমার দে, হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) থেকে : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে শনিবার নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিচু এলাকায় চতুর্থ বারের মতো আবারো ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই রান্না করতে না পেরে শুকনা খাবার খেয়ে আছেন। এদিকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেত। পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে খুব কষ্টে আছেন নদী পাড়ের মানুষ। অপরদিকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে শাকসবজি। জানা গেছে, এ বর্ষা মৌসুমে চতুর্থবারে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় আবারো জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গিমারীর ইউনিয়নের ধুবনী কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ বাগডোরা, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App