×

সারাদেশ

চুরি ও নষ্ট হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১০ এএম

চুরি ও নষ্ট হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ

কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব ও অবহেলায় গাইবান্ধার পরিত্যক্ত দুটি ঘাট লাইনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে খুলে নিয়ে যাচ্ছে রেললাইনের স্লিপার, ফিসপ্লেট, নাট-বল্টু। অনেক স্থানে রেললাইনই চুরি হয়ে গেছে। বিগত ২৬ বছরে রেলপথ দুটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত রেলযাত্রী ফেরি ও ওয়াগান ফেরি পারাপারের জন্য নৌরুট চালু করে।

এজন্য সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া স্টেশন থেকে তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত রেলপথসহ (ইয়ার্ড লাইন) ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করা হয়। তখন থেকে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের অন্তত ১২টি জেলার মানুষ ট্রেনযোগে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন। ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন। সে সময় ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলোর দূরত্ব দুই-তিনঘণ্টা কমেছিল।

১৯৯৭ সালে নদীর নাব্য সংকটের কারণে ফুলছড়ি উপজেলার অন্তর্গত তিস্তামুখঘাটটি একই উপজেলার বালাসিতে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে প্রায় ২৬ বছর ধরে এ রেলপথটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে গাইবান্ধার পার্শ¦বর্তী ত্রিমোহনী স্টেশন থেকে বালাসিঘাট পর্যন্ত অতিরিক্ত রেলপথসহ (ইয়ার্ড লাইন) ১২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মিত হয়। তখন থেকে বালাসি-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল। ২০১৬ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য হ্রাসের কারণে বালাসি-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর থেকে প্রায় ৭ বছর ধরে ত্রিমোহনী-বালাসি রেলপথ পরিত্যক্ত রয়েছে। দুটি রেলপথে মোট প্রায় ২৪ কিলোমিটার রেলপথ এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে রেললাইন। কিছু লাইন মাটির নিচে পড়েছে। রেলপথ দুটিতে ব্যবহৃত মূল্যবান নাট-বল্টু, রেলপাত, পয়েন্টক্রসিংসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর বেশির ভাগই আর নেই। এরপরও এই দুটি রেলওয়ে ঘাট লাইন পথে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নিরাপত্তাহীনভাবে পড়ে আছে।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রেলপথের প্রায় স্থানে কাঠের স্লিপার নেই। কিছু স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বেশির ভাগ রেললাইন মাটির নিচে চাপা পড়েছে। অবশিষ্ট লাইনের নিচে মাটি নেই, অনেক জায়গায় জঙ্গলে ঢেকে গেছে লাইন। অনেক স্থানে ফিসপ্লেট, নাট-বল্টু, স্লিপারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মালামালের কোনো অস্তিত্ব নেই। রেলপথের মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক কিলোমিটার লাইন কাটা।

বিশেষত ত্রিমোহনী-বালাসি রেলপথের কঞ্চিপাড়া, মধ্যকঞ্চিপাড়া, বালাসি এবং বোনারপাড়া-তিস্তামুখ রেলপথের গজারিয়া, উল্লা ভারতখালি এলাকা থেকে বেশি মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এমনকি, বালাসিসংলগ্ন এলাকায় লাইনের উপর অনেক পরিবার ঘরবাড়ি স্থাপন করেছে।

এছাড়া ত্রিমোহনী-বালাসিঘাট লাইনের মালামাল সরিয়ে না নিয়ে দখলকৃত অস্থায়ী জমির ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১২ বছরের অর্থ বকেয়া থাকায় স্থানীয় জনগণের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অন্যদিকে বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট লাইনের বিভিন্ন স্থানে জনগণ ঘরবাড়ি, দোকানপাট গড়ে তোলার কারণে রেললাইনের অনেক স্থানে চিহ্ন নজরে পড়ছে না। ময়লা আবর্জনা, মাটির ঢিবি, দোকান পাট ও ঘরের নিচে খুঁজে লাইনের সন্ধান পাওয়া যায়। এভাবে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। উদ্ধারের জন্য কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালে রেল মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ত্রিমোহনী-বালাসিঘাট লাইন ভেঙে মালামাল নিরাপদ স্থানে সরানোর আদেশ দেয়া হয় এবং বালাসিঘাটের মেরিন বিভাগের সব ফেরি ও ইঞ্জিন নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মেরিন বিভাগ ইতোমধ্যে ফেরি ও ইঞ্জিন নিলামে বিক্রির কাজ শেষ করেছে। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগ ত্রিমোহনী-বালাসিঘাট লাইনের মালামাল তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে না। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের আওতাধীন গাইবান্ধার এই রেলপথ দুটির দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের বোনারপাড়া ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের।

এই কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট রেলপথ দেখা শোনার জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রয়েছে। তারপরও কীভাবে চুরি যাচ্ছে- তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এছাড়া ত্রিমোহনী-বালাসি রেলপথ গুটিয়ে বা রেলপথ উঠিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল রাজশাহীতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে রেলপথটি গুটিয়ে নেয়া হবে। তবে কত টাকার মালামাল চুরি গেছে, তা বলা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App