×

সারাদেশ

আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৪৯ পিএম

আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি

মির্জাগঞ্জ থানায় আসলে থানার এসআই আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। ছবি: মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি
আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে বাদীর কাছে অর্ধ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত উপরিদর্শকের (এসআই) নাম আবুল হোসেন। টাকা না দেওয়ায় উল্টো বাদীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন ওই এসআই। সবশেষ আসামির কাছ থেকে একটি চুরির অভিযোগ নিয়ে ওই বাদীকে আটক করার হুমকি দেন দেন ওই এসআই।

এ ধরনের হুমকি পেয়ে ভুক্তভোগী নারী সোমবার (২১ আগস্ট) বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মানসুরাবাদ গ্রামের মৃত জিন্নাত আলী জোমাদ্দারের ছেলে শামসুল হক জোমাদ্দারের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। এটা ছিলো তাদের উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের সময় স্বামী শামসুল হককে ২ লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয় বলেও জানান ভুক্তভোগী নারী। এছাড়া বিয়ের এক বছর পরে স্বামী তার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। স্বামীর চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় তিনি ভুক্তভোগীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করলে এ ঘটনায় তিনি চলতি বছরের ৪ এপ্রিল পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মির্জাগঞ্জ থানায় আসলে থানার এসআই আবুল হোসেন বাদীকে ফোন করে বারবার দেখা করতে বলেন। জীবিকার তাগিদে তিনি ঢাকায় থাকলেও বারবার এসআইয়ের হুমকি-ধামকির কারণে ঢাকা থেকে আসতে বাধ্য হন। ঢাকা থেকে এসে আমি এসআই আবুলের সাথে দেখা করলে সে আসামি গ্রেপ্তার করার জন্য টাকা দাবি করে।

আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুসের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি

তিনি আরও বলেন, ওই এসআই আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে না পেয়ে আমার বৃদ্ধা মায়ের কাছে ৫০,০০০ টাকা দাবি করেন। পরে মামলার তারিখ আসলে আদালতে হাজির হয়ে সংসার করতে রাজি হওয়ার শর্তে আমার স্বামীর জামিন হয়। জামিনের পরে আমার স্বামী ৫/৭জন লোকসহ আমার বাবার বাড়ি থেকে এসে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমার স্বামী তার বাড়িতে আমাকে রেখে পরের দিন পালিয়ে যায়। এরপর ২৬ জুন এসআই আবুল হোসেন একটি নোটিশের ফটোকপি নিয়ে এসে আমার তালাক হয়েছে বলে আমার গায়ে হাত দিয়ে টেনেহিঁচড়ে অর্ধ উলঙ্গ করে ঘরের বাহিরে ফেলে দিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে সে তার হাতের মোবাইল ফোন দিয়ে সব কিছুর ভিডিও করে আর হুমকি-ধামকি দিতে দিয়ে চলে যায়। কিছু দূর যাওয়ার পরে আমার মুঠোফোনে কল করে সমাধান করে দেবে বলে আবারও টাকা দাবি করে। এই ঘটনার কিছুদিন পরে আমি আমার শ্বশুর বাড়ির অন্যান্যদের জ্বালা-যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য আবারও আমার বাবার বাড়ি চলে আসি। এখন ২/৩ দিন ধরে আমিসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ হয়েছে বলে জানিয়ে আবারও টাকা দাবি করছেন এসআই আবুল। যদি টাকা দেয়া না হয় তাহলে আমাদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়ে যান তিনি।

ভুক্তভোগী শারমিনের মা বলেন, গত শনিবার এসআই আবুল হোসেন বাড়িতে এসে এই বলে হুমকি দেয় যে, আপনাদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছে। যদি টাকা দেয়া না হয় তাহলে আপনার দুই নাতিসহ আপনাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মির্জাগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেনর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে থানায় গিয়ে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ওই ঘটনা ঘটেছে আমি এই থানায় যোগদানের আগে। তাই এই বিষয়ে আমি অবগত নই। আগে ঘটনাটি জেনে তারপর আমি বক্তব্য দিতে পারবো এবং ঘটনাটি যদি আমার কাছে আসে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী অফিসিয়াল নিয়ম-কানুন মেনে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, তদন্ত করে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আসামি ধরতে দাবিকৃত ঘুসের টাকা না দেয়ায় বাদীর শ্লীলতাহানি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App