×

সারাদেশ

সমুদ্রে ধরা পড়ছে বড় ইলিশ, হচ্ছে চড়া দামে বিক্রি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম

সমুদ্রে ধরা পড়ছে বড় ইলিশ, হচ্ছে চড়া দামে বিক্রি

সমুদ্রে ধরা পড়ছে বড় ইলিশ, হচ্ছে চড়া দামে বিক্রি। ছবি: আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

গভীর সমুদ্রে জাল ফেলতেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বড় সাইজের কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ। জেলেদের আহরিত এসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে খুশি জেলে সহ মৎস্যজীবিরা। দক্ষিণাঞ্চলেরর দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরে প্রতিদিন গড়ে ৮’শ থেকে ১ হাজার মন ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে মৎস্য বন্দর সূত্রে।

এভাবে সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লে কেটে যাবে জেলেদের দুঃখ দূর্দশা। ফিরে আসবে মৎস্য খাতে সুদিন। দেশের বাজারে ইলিশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তিন দফায় গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খালি হাতে তীরে ফিরে আসতে হয়েছে জেলেদের। এতে অনেকটা হতাশা গ্রস্থ হয়ে পরেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা। আবহাওয়া অনুকুলে আসলে ফের ১২ আগস্ট গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারের উদ্দেশ্যে সহস্রাধিক জেলে ট্রলার। মাছ শিকার শেষে বেশির ভাগ ট্রলারই ঘাটে ফিরেছে রুপালি ইলিশ নিয়ে। ৭'শ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে। প্রতিটি ট্রলারে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। জেলেদের আহরিত এসব ইলিশ বরফ দিয়ে ককসিট ভরে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মোকামে। বরফ কলগুলোতেও বরফ উৎপাদন বিকিকিনি চলছে হরদমে।

সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পরায় স্বস্তি ফিরেছে জেলে সহ মৎস্য সংশ্লিষ্টদের মাঝে। তবে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা অবাধে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। গভীর সমুদ্রে নৌ বাহিনীর টহল জোরদারের দাবি জানান জেলে মৎস্যজীবিরা।

এদিকে, বাজারে ইলিশ আসায় প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরেছে মৎস্য আড়তগুলোতে। বিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। তবে গভীর সমুদ্রে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পরলেও সমুদ্র উপকূল ভাগে মাছ শিকাররত জেলেদের জালে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ তেমন একটা ধরা পড়ছে না বলে দাবি মৎস্য আড়তদারদের।

মৎস্য বন্দর মহিপুরের এফবি সুমি আকতার ট্রলারের মাঝি কামরুল ইসলাম প্রকাশ কালু জানান, গভীর সমুদ্রে ৮ দিন মাছ শিকার শেষে বড় সাইজের ৩ হাজার ইলিশ নিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে তিনি আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে পৌঁছায়। তিনি জানান, ৩ হাজার পিচ ইলিশ যার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

মায়ের দোয়া-২ ট্রলারের মাঝি মো. ফরিদ জানান, বৈরী আবহাওয়া শেষে মাছ শিকারে গভীর সমুদ্রে যান তারা। ১০ দিন সমুদ্রে ছিলেন তারা। দশ দিনে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বলে জানান তিনি। একই কথা জানান, এফবি শুভ সকাল ট্রলারের মাঝি জহিরুল ইসলাম। এভাবে গভীর সমুদ্রের প্রতিটি ট্রলারে ইলিশ পেয়েছে।

তবে এসব জেলেদের দাবি বাংলাদেশের জল সীমায় ভারতীয় জেলেরা অবাধে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে কোন বাধা ছাড়াই। সমুদ্রে ভারতীয় ট্রলারের কারণে জাল ফেলার জায়গা পাচ্ছেন না দেশীয় জেলেরা। এমন অভিযোগ গভীর সমুদ্রে মাছ শিকাররত প্রতিটি ট্রলারের জেলেদের। এসব জেলেদের দাবি নৌ-বাহিনীর টহল জোরধার করার মাধ্যমে ভারতীয় জেলেদের বঙ্গোপসাগরে যাতে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করা হলে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে দেশীয় বাজার।

মহিপুর মৎস্য বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী ও নদী ফিসের মালিক মো. নজরুল ইসলাম নজির জানান, তার আড়তে গত ৪-৫ দিনে এসব ট্রলার ইলিশ নিয়ে এসেছে প্রতিটি ট্রলারে ১০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছে।

মেসার্স হাওলাদার ফিসের মালিক মো. জলিল হাওলাদার বলেন, গভীর সমুদ্রে অনেক ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। প্রতিটি ট্রলার কম-বেশি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে। তার তথ্যমতে মহিপুর মৎস্য বন্দরে একটি ট্রলারে সর্বোচ্চ ৯৬ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছে।

মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা জানান, গভীর সমুদ্রে অনেক ইলিশ দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রলারই ইলিশ নিয়ে ফিরছে। এসব ট্রলারে ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা বিক্রি করছে। এর কম-বেশিও আছে।

তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়লেও উপকুল ভাগে ইলিশ খুবই কম। উপকুল ভাগের জেলেরা দেনায় জর্জরিত। কোনমতে জীবন চলছে তাদের।

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় ট্রলার অনুপ্রবেশ করে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে আমাদের জেলেরা ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসতো। এসব বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বারবার অবহিত করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না জেলেরা। এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্র মাছ শুন্য হয়ে পরার আশংকা করছেন আড়তদার সমিতির এই নেতা।

আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। আর সব ট্রলারে ইলিশ পাচ্ছে না। কিছু কিছু ট্রলারে ইলিশ পাচ্ছে। তবে ইলিশ কম ধরা পড়লেও দাম ভালো পাওয়ায় জেলেদের পুশিয়ে যাচ্ছে। তার দাবি গভীর সমুদ্রে ইলিশের দেখা মিললেও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ইলিশের আকাল এখনও রয়েছে। ছোট ছোট নৌকা ও ট্রলারে পোয়া, ডাডি, ফাহাসহ বিভিন্ন প্রকারের সাদা মাছ পেলেও তা পরিমানে খুবই কম।

তিনি বলেন, এক একটি ট্রলারে তৈল, বরফসহ ১ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়। বিক্রি করছেন ৫০ হাজার টাকা। ট্রলার মালিক ও আড়তদারা অনেকেই লোকসান গুনছেন। তবে সামনে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে এমনটাই প্রত্যাশা এই মৎস্য আড়তদার সমিতির নেতার।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জলবায়ূর ইতিবাচক প্রভাব ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে। ফের সাগরে গেলে বড় আকারের প্রচুর ইলিশ ধরা পরতে পারে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। কুয়াকাটা পৌরসভা সহ কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত প্রায় ১৯ হাজার জেলে রয়েছে। এসব জেলেরা ফের সমুদ্রে গেলে জেলেদের জালে ধরা পরবে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। হাসি ফুটে উঠেবে জেলেদের মাঝে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App