×

সারাদেশ

সাঈদীর জানাজাকে কেন্দ্র করে চকরিয়ায় সংঘর্ষ, নিহত ১

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম

সাঈদীর জানাজাকে কেন্দ্র করে চকরিয়ায় সংঘর্ষ, নিহত ১

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে দুঃপক্ষের গোলাগুলিতে একপথচারী নিহত হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে পুলিশসহ আরও ১৫ ব্যক্তি।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকাল চারটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বায়তুশরফ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে থমথমে বিরাজ করছে। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির নাম ফোরকানুল ইসলাম (৫৫)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে আবদুল বারী পাড়ার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। পেশায় একজন কৃষক বলে জানা গেছে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ, এসআই রাজিব, এসআই মামুন, কনেষ্টবল আবদুর রউফ ও সাগর। তবে তাৎক্ষণিক আহত পথচারীদের নাম পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শরীরা জানান, মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে পুরাতন জামে মসজিদে যুদ্ধাপরাধী মামলার আজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরপর তিনটি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় গায়েবানা জানাজা শেষে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় সড়কে দাঁড়ানো অবস্থায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে জামায়াত শিবিরের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। তখন পুলিশ-জামায়াত শিবিরের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুল ইসলাম (৫৫) নামে একব্যক্তি ঘটনাস্থলে মারা যায়।

এ সময় আরও ১০-১২ জন পথচারী শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল ও জমজম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৭জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করার কথা জানিয়েছেন জমজম হাসপাতালের এমডি গোলাম কবির।

তিনি জানান, তার হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না থাকায় গুলিবিদ্ধ ৭জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে তাৎক্ষণিক ভাঙ্চুর ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা জামায়াত শিবিরের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুকে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে, নিহত ফোরকানুল ইসলামের স্বজনরা জানিয়েছেন, ফোরকান জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুঃপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনার সময় অস্ত্রধারী মুখোশ পরিহিত কিছু লোক গোলাগুলি করছে বলে জানান স্বজনরা। ফোরকানুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষিজীবি বলে জানান তার স্বজনরা।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ জানান, ঘটনার সময় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান ও উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্তসহ আমরা লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে চাল বিতরণ করছিলান। ওইসময় জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা পৌরসভার নামার চিরিঙ্গা নামক স্থানে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ছিলো। জানাজা শেষে মিছিল করার চেষ্টা করে তারা। ওই সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশের গাড়ি দেখে উত্তেজিত হয়ে গাড়ির উপর হামলা করে।

তিনি আরও বলেন, জামায়াত শিবির পুলিশের উপস্থিতি দেখে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ও পুলিশের গাড়ি ভাঙ্চুর করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড পাকা গুলি ছুটে। জানাজায় আগত মুসিল্লীরা দিক-বেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। সেখানে পুলিশের আরও চারসদস্য ইটপাটকেলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তান করা হয়নি। তবে কার গুলিতে পথচারী নিহত হয়েছেন তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, নিষেধ করা সত্ত্বেও স্থান পরিবর্তন করে গায়েবানা জানাজা পড়ে। পরে মিছিল নিয়ে পৌর শহরের মহাসড়কে পুলিশের উপর হামলা চালায়। ভাংচুর করা হয় পুলিশ ও পাবলিকের গাড়ি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মৃত্যুর ব্যাপারে ইউএনও বলেন, হয়ত নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে হতাহত হতে পারে। তা তদন্ত করা হবে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌরশহরে ইউএনও জেপি দেওয়ান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব-উর-রাজার নেতৃত্বে বিপুল পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য হাঙ্গামা দমাতে সড়কে অবস্থান করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App