×

সারাদেশ

অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী কেনা-ব্যবহার থেকে সাবধান!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম

অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী কেনা-ব্যবহার থেকে সাবধান!
অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী কেনা-ব্যবহার থেকে সাবধান!
অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী কেনা-ব্যবহার থেকে সাবধান!
অনলাইনে প্রসাধন সামগ্রী কেনা-ব্যবহার থেকে সাবধান!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর ভেজাল ও নিষিদ্ধ প্রসাধনীর জমজমাট ব্যবসা করে আসছিলেন নগরীর আলকরন এলাকার আনজুমান আরা। কোতোয়ালী থানাধীন আলকরনের ১ নং গলির একটি আবাসিক ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া নিয়ে কোনো ধরনের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই রমরমা এই অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে সাধারন ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। অথচ তার বাড়ি পশ্চিম মাদারবাড়িতে। এতদিন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করলেও রবিবার জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে তার এই অবৈধ ব্যবসা ধরা পড়ে যায়। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতারা এসব অনলাইন প্রতারক ব্যবসায়ীদের থেকে সাবধান হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

রবিবার (১৩ আগস্ট) আলকরনের ওই বাসায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমান আদালতের টিম আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার ভেজাল ও নিষিদ্ধ প্রসাধন সামগ্রী আটক করে। এসময় বিএসটিআই ও পুলিশ সদস্যরা এই ভ্রাম্যমান আদালতকে সহায়তা করেন। তবে আনজুমান আরা নামে ওই প্রতারক ব্যবসায়ীকে পাওয়া না গেলেও তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মঈনুদ্দিন আকবরকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও প্রায় পাঁচ লাখ টাকার পণ্য জব্দ করা হয় বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

তিনি বলেন, আনজুমান আরা নামে একজন নারী ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ইউনিক মার্ট নাম দিয়ে এসব ভেজাল পণ্য বিক্রয় করে ভোক্তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার সেখানে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এসময় মূল মালিক আনজুমান আরা উপস্থিত না থাকলেও হাতেনাতে আটক করা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মঈনুদ্দিন আকবরকে।

ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানান, ওই ঘর থেকে আনজুমান আরার একটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। যাতে দেখা যায়, তিনি পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার ১৩৯ নম্বর ডিটি রোডের বাসিন্দা ও তার বাবার নাম আসাদুর দৌলা।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারি ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত আরো জানান, ওই গোডাউন থেকে বিভিন্ন নামীদামী ব্রান্ডের (গার্নিয়ার, পন্ডস, ডাবর, ইমামি, হুদা বিউটি) বিপুল পরিমাণ ফেস ওয়াস, স্কীন ক্রিম, শ্যাম্পু, হেয়ার ওয়েল, ফেস প্যাক, মেহেদী, সানস ক্রিম, ম্যাসাজ ক্রিম, আইলাইনার, ফেস পাউডার, স্কার্ভি রোগের জন্য ভিটামিন সি এর ইনজেকশন জব্দ করা হয়। এছাড়া হাইড্রোকুইনিন ও মার্কারি এর অধিক উপস্থিতির কারণে বিক্রয় নিষিদ্ধ ফোর-কে প্লাস ক্রিম জব্দ করা হয়। এছাড়া নিম স্কীন ম্যাসাজ ক্রিম ও কাবেরী নামের দুটি ফেস ক্রিমে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না নিয়েই ভুয়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।অধিকাংশ পণ্যের গায়ে উৎপাদন এর তারিখ, মেয়াদ ও মূল্য ছিল না। এসকল অপরাধে আটক মঈনুদ্দিন আকবরকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও প্রায় পাঁচ লাখ টাকার পণ্য জব্দ করা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো আবাসিক ভবনে কি করে অবাধে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন আনজুমান আরা? কারণ বাসা বা অফিস ভাড়া পেতে হলে ভাড়াটিয়ার কিছু সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য সংগ্রহে থাকতে হয় বাড়ি বা ভবনের মালিকের কাছে এবং তা সংশ্লিষ্ট থানায়ও জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে ওই ভবনের মালিক তা পালন করেছিলেন কি না সে ব্যাপারেও তদন্ত করা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এ বিষয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, যে কোনো ব্যবসা করতে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হয়। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবাধে যেহারে অনলাইন ব্যবসা শুরু হয়েছে তাতে অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন। সরকার কিন্তু এই অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রেই বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে ই-কমার্স রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু কতজন তা মানছেন ও মানছেন না তার জন্য সঠিক ও কঠোর তদারকি প্রয়োজন। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি তদারকি দরকার। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সাবধান হতে হবে।

ক্যাবের এই নেতা বলেন, যাদের কোনো নিবন্ধন নেই তারা যদি প্রতারণা করে ক্রেতাদের সঙ্গে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। পাশাপাশি বাড়ি বা ভবন মালিকদেরকেও ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া এবং তাদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। কারন এভাবে ভাড়া নিয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড করার অনেক নজির রয়েছে আমাদেও দেশে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়ান। পাশাপাশি সাধারন জনগণকেও সচেতন হতে হবে, শুধু চটকদার বিজ্ঞাপন দেখেই সেই ফাঁদে যেন কেউ না জড়ান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App