×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৯ পিএম

চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল

চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল
চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল
জেলা প্রশাসনের অভিযান ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে অবৈধভাবে ও কৌশলে খাড়াভাবে পাহাড় কেটে তা সমতল করার পাঁয়তারা করছে পাহাড়খেকোর দল। এ চক্রটি এমনভাবে পাহাড় কেটেছে যাতে করে বৃষ্টির সময় পাহাড়ি মাটি ধ্বসে পড়তে পারে। এর ফলে ওই চক্রটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়েছে বলে প্রচার করে তা সহজেই সমতল করে তাদের ফায়দা হাসিল করতে পারবে। তবে কিছু অসাধু পাহাড়খেকো মানুষের এভাবে পাহাড় ধ্বংসের কৌশলটি জানার পর সেখানে শনিবার (১২ জুলাই) অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান দল। অভিযানের সময় পাহাড় কাটার দায়ে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদেরকে আটক করা যায়নি। তবে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগরীর বায়োজিদ লিংক রোডের পার্শ্ববর্তী উত্তর পাহাড়তলী মৌজা এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা ও ঘরবাড়ি বানানোর সংবাদ পেয়ে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার ( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের নেতৃত্বে এই চালানো হয়। এই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মামুন আহমেদ ও আকবরশাহ থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান পরিচালনাকারী এই ম্যাজিষ্ট্রেট জানান, অভিযানকালে পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্তরা পালিয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, সিডিএ লিংকরোডের পার্শ্বে প্রায় ৯০ ডিগ্রী খাড়াভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করেছে আকবর হোসেন খোকন নামের এক ব্যাক্তি। শুধু তাই নয়, দেখা গেছে- সেখানে এই আকবর হোসেন বায়নানামা সূত্রে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দিয়েছেন। এভাবে পাহাড় কাটার ফলে যেকোন সময় ভূমিধ্বস হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেনে-বুঝেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে খাড়াভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে যাতে বৃষ্টিতে ওই পাহাড়ি এলাকার জমি ধ্বসে পড়ে। আর তাতে করে ওই পাহাড়খেকো দল প্রচার করতে পারবে যে- তাদের পাহাড়ি জমি প্রাকৃতিকভাবে ধসে পড়েছে। পরবর্তীতে তাদেরকে ওই পাহাড়ি ভূমি সমতল করতে কোন বেগ পেতে হবে না। মূলত: এসব কৌশলেই বিভিন্ন পাহাড়ি জমি সমতল করছে সুযোগ সন্ধানী পাহাড়খেকোর দল। ম্যাজিষ্ট্রেট উমর ফারুক জানান, রেকর্ড অনুযায়ী উত্তর পাহাড়তলী মৌজার টিলা শ্রেণির ১৯৩ দাগের ৬৪১/১০ খতিয়ানটির মালিক বিবির হাট, পশ্চিমপাড় এলাকার জাফর আহামদ মজুমদার, পাড়া ও মোহাম্মদ হাছান আহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, সাং- পশ্চিম ষোলশহর, বিবির হাট বড়, বাড়ি লেইন, থানা: পাচলাইশ। ওই জায়গাটির বায়না মূলে মালিক মো. আকবর হোসেন খোকন। তাদের পাহাড় কাটার বিষয়ে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে নিয়মিত মামলা করা হচ্ছে। এছাড়াও ৬৪১ নং বি এস খতিয়ান ও ৬৪১ হতে সৃজিত সকল নামজারি খতিয়ান সমূহের মালিকের লিংক রোড এলাকায় ১৯৩ দাগে পাহাড় কাটারও সত্যতা পাওয়া গেছে। এ টিলা শ্রেণীর জমিতে ১৯৩ দাগে সর্বমোট ১ দশমিক ৬০ একর জায়গা এবং একাধিক মালিকানা রয়েছে। ওই জায়গার মালিকানা বিষয়ে উপস্থিত মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে কেউ মালিকানা স্বীকার করেনি। তবে রেকর্ড অনুযায়ী এই বিপুল পরিমান পাহাড়ি জায়গার মালিক চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৭ জন ব্যক্তি। তবে এই দাগে ১৭ জনের মালিকানা থাকলেও অধিকাংশ জায়গা বায়নাসূত্রে মালিক মো. আকবর হোসেন খোকন। তাদের সবার বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলা করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। চট্টগ্রামে কৌশলে পাহাড় কাটছে পাহাড়খেকোর দল জানা গেছে, এর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ২ দফা সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেলেও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কোন রকম মামলা করেনি। তবে জনস্বার্থে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের বহু অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং অনেক মামলা করা হয়েছে। আজ শনিবারও রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, লিংক রোডের পাশে দৃশ্যমান জায়গায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করছে একটি চক্র।দ্রুততার সাথে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এক্ষেত্রে কারও ছাড় নেই। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। ইতোমধ্যেই যারা পাহাড় কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App