×

সারাদেশ

কিস্তির জ্বালায় স্বামীর আত্মহত্যা, ঘরছাড়া গৃহবধূ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

কিস্তির জ্বালায় স্বামীর আত্মহত্যা, ঘরছাড়া গৃহবধূ

কিস্তির জ্বালায় স্বামীর আত্মহত্যা, ঘর ছাড়া গৃহবধূ। হাসান মোস্তাফিজুর মুজিবনগর (মেহেরপুর)

মেহেরপুরের মুজিবনগরে কিস্তির জ্বালা সইতে না পেরে হিরক মন্ডল (৩৫) নামের একজন রাজমিস্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) দুপুরে নিজ ঘরের বাঁশের আড়ার সাথে গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। নিহত হিরক মন্ডল মুজিবনগর উপজেলার মানিক নগর গ্রামের উৎপল ওরফে নতু মন্ডলের ছেলে।

পরে মুজিবনগর থানা পুলিশের একটি দল এসে লাশ উদ্ধার করে এবং অপমৃত্যু মামলা রুজু করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনার পর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঘর ছেড়েছে নিহত হিরকের স্ত্রী শেফালি খাতুন। ১৫টি এনজিওর চাপ এখন তার মাথায়।

নিহতের ভাবি আইরিন মন্ডল বলেন, যে দিন হিরক আত্মহত্যা করে সেদিনও কয়েকজন এনজিও কর্মী তাদের বাড়িতে এসে টাকার জন্য চাপ ও গালিগালাজ দেই। এই জ্বালা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে।

খোঁজ নিয়ে জান গেছে, কারিতাস, আশা, আরআরএফ, সিএস, উদ্দীপন, আশ্রয়, গুড নেইবার্স, ব্রাক, গাক, দারিদ্র্য বিমোচনসহ ১৫টি এনজিও থেকে হিরক মন্ডল লোন তোলে। তবে সব লো গুলো ৫০ হাজার টাকার নিচে। ইতি মধ্যে সে কয়েকটা এনজিওর ৩২ কিস্তি দিয়েছে। বাকি কিস্তির টাকার জন্য মাস খানেক সময় চান সবগুলো এনজিওর কাছে। কিন্তু এনজিওগুলো সময় না দিয়ে টাকার জন্য দূর্ব্যবহার শুরু করে। এভাবে ২ সপ্তাহ যাওয়ার পর বিভিন্ন এনজিওর ম্যানেজাররা হিরকের বাড়ি গিয়ে টাকা জন্য চাপ দিতে থাকে।

এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে নিহতের স্ত্রী শেফালি মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করার হলে অবস্থান গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ঘটনার দিন কারিতাস এনজিওর মাঠ কর্মীসহ কয়েকটি এনজিও আমাদের বাড়িতে এসে কিস্তির টাকা দাবি করে। কিন্তু সে মুমূর্তে আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। আমিসহ আমার স্বামী হিরক তাদের বারবার অনুরোধ করার পরও টাকা দাবি করে। দিতে না পারলে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। লজ্জা সইতে না পেরে ওইদিনই দুপুরে আমাদের অজান্তেই ঘরের ছাউনির আড়ার সাথে গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। আমি নিজেও বাড়ি ছাড়া হয়েছি।

এ বিষয়ে আশা এনজিওর মুজিবনগর ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাদের এনজিও থেকে চাপ নেই, তবে অন্য এনজিওরা যা করে, আমরা করলে কেউ টিকতেই পারতো না। হিরকের আত্মহত্যার বিষয়টি আমার মোটেই জানা নেই। আমাদের সব কটি গ্রাহক ভালো। বাকি এনজিওগুলোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও শুক্রবার থাকায় অফিস বন্ধ ছিল।

মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, এনজিওগুলোর তাদের গ্রাহকদের সাথে সহনশীল আচরণ করার জন্য আমাদের মিটিংএ বারবার বলা হয়। তাদের উচিত লোন গ্রহণকারীর সক্ষমতা যাচাই বাছাই করে লোন দেয়া। সেই সাথে লোন শোধের ব্যাপারে গ্রাহকরা কি পদ্ধতি ব্যবহার করছে সে আদেশ কার্যকরী কি না সেটা দেখা ও পরামর্শ দেয়া। কোন এনজিওকর্মী কারও সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে না। অভিযোগ দিলে অবশ্যই সেটার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা মুজিবনগর থানার সাব ইন্সপেক্টর বিপ্লব হালদার জানান, অভিযোগ না থাকায় ওসি স্যারের নির্দেশে অপমৃত্যু মামলা রুজু করে লাশ পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App