×

সারাদেশ

চালু হতে যাচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১০:১১ এএম

চালু হতে যাচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর

ছবি: সংগৃহীত

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল খাগড়াছড়ির রামগড়। ঐতিহাসিক এই রামগড়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন হাজারো বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভারত থেকে ফেনী নদীর উপর নির্মিত কাঠের ব্রিজ দিয়ে অস্ত্র গোলা বারুদ এনে জমা করা হতো এই রামগড়েই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দিয়েছেন শত শত বীর বাঙালি। সেই ফেনি নদীর উপরে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ নির্মাণ করে স্থলবন্দর খুলতে যাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের আরেকটি নতুন সংযোগস্থল চালু হতে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে উদ্বোধন হওয়া এই সেতুর মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামসহ ৭ রাজ্যের (সেভেন সিস্টার) সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগের মেলবন্ধন হতে যাচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহনের খরচ ও সময় কমবে। প্রসার ঘটবে সংস্কৃতি, পর্যটন খাতের। দুই দেশের চিকিৎসা ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। স্থলবন্দরটির ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার ফলে পার্বত্য অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মানুষের যাতায়াতের কষ্টের অবসান হবে। নতুন ‘বাণিজ্য করিডোর’ হিসাবে খ্যাত স্থলবন্দরটির ইমিগ্রেশন শিগগিরই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অবকাঠামোগত সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই লোকজন যাতায়াত করতে পারবেন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় থেকে রামগড়ের ঐতিহাসিক পটভূমির ইতিহাস স্মরণ করে সেই রামগড়েই ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ নির্মাণ করে সরকার। নির্মিত এ মৈত্রী সেতুর দৈর্ঘ্য ৪শ ১২ মিটার, প্রস্থ ১৪ দশমিক ৫ মিটার এবং ডাবল লাইনযুক্ত। এ সেতু থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বন্দরের হাতের নাগালে চলে আসবে, যা এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সরজমিনে দেখা যায়, ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে খাগড়াছড়ি রামগড়কে যুক্ত করেছে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশ অংশে ১৪০ কোটি টাকায় নির্মাণ হয়েছে রামগড় স্থলবন্দর। বন্দরের ইমিগ্রেশন ভবনের কাজও শেষ। শিগগিরই ভিসা নিয়ে দুই দেশের মানুষ যাতায়াত করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুটির পূর্ব প্রান্তে আপাতত ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে বিজিবি। তবে স্থানীয়রাসহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেক উৎসুক মানুষ সেতুটি দেখতে আসছেন। তারা সেতুটি ঘুরে দেখছেন, কেউবা সেলফি তুলছেন, ভিডিও করছেন। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে বিএসএফ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। সেখানে ভারত সরকার নির্মাণ করেছে ইমিগ্রেশন ভবন।

রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক সরোয়ার আলম ভোরের কাগজকে বলেন, রামগড় সাব্রুম স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি দেখার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দল সরজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করার জন্য রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন দিনক্ষণ ঠিক করে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ইমিগ্রেশন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এই স্থলবন্দর ঘিরে আশপাশের সড়ক অবকাঠামো খাতেও পরিবর্তন এসেছে। এই পথে যাতায়াত সুবিধার জন্য আপাতত মীরসরাই করেরহাট থেকে হেয়াকো হয়ে রামগড় পর্যন্ত ডাবল সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এ সড়কের সব সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া স্থলবন্দরের সুবিধার্থে বর্তমানে চট্টগ্রামের বড়ইয়ারহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত সেতু ও কালভার্ডসহ ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তের কাজ চলছে। ইমিগ্রেশন ভবনের আশপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকানপাট।

রামগড় বন্দরের ফলে ভারত সমুদ্র পথে বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করতে পারবে। এতে পণ্য পরিবহনে ভারত সুবিধা পেলেও বাংলাদেশ রাজস্ব খাতে লাভবান হবে। ইমিগ্রেশন ভবনের আগে এই সড়কে বসানো হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন মাপার স্কেল। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা মালবাহী ট্রাকের ওজন পরিমাপ করা হবে। আর এই সেতু ধরেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য চলে যাবে ভারতের ৭টি রাজ্যে। আর কম সময়ে স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা বিমানবন্দর দিয়ে চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ভারত যেতে পারবেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ। দক্ষিণ ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম, আসাম, মিজোরাম এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের পোর্ট সুপারিনটেনডেন্ট এস এস মাসুম বিল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, এখানে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন বসবে। প্রথম পর্যায়ে যাত্রী পারাপার হলেও এরপর শুরু হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি। আমাদের সব কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউলের অপেক্ষা করছি।

স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানে তাদের ভারতে যেতে হলে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট দিয়ে যেতে হয়। স্থলবন্দর দিয়ে যেতে চাইলে অনেক দূর ঘুরে ভোগান্তি নিয়ে ভারতে যেতে হয়। রামগড় স্থলবন্দর হওয়ায় খুব সহজে তারা ভারতে যেতে পারবেন। সাত রাজ্য ছাড়াও আগরতলা বিমানবন্দর ব্যবহার করে কম সময়ে ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ যেতে পারবে। পাশাপাশি ওপার সীমান্তে তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে। স্থলবন্দরটি চালু হলে মন চাইলেই তারা দেখা করতে পারবেন সহজে। এতে তারা ভীষণ খুশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App