×

সারাদেশ

বিস্তীর্ণ এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:১৬ এএম

বিস্তীর্ণ এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

ছবি: ভোরের কাগজ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যান চলাচল শুরু

অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বন্যার পানিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকাসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে মহাসড়ক থেকে বন্যার পানি নামলেও এখন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও লোকালয় তলিয়ে আছে পানিতে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বেশির ভাগ এলাকা থেকে পানি না নামায় বাড়িতে ফিরতে পারছেন না লোকজন। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। এখনো বন্যাকবলিত সব এলাকায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এর আগে পাঁচদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ উপজেলাসহ কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায়। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ। বিশেষ করে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা এলাকা কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। পাশাপাশি চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পটিয়া, রাউজানের অধিকাংশ এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, ডোবা, ফসলের ক্ষেত। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা দুটিতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের হিসাব মতে, সাতকানিয়ায় সাড়ে ২২ হাজার পরিবার, চন্দনাইশে ৫ হাজার, পটিয়ায় ১৬ হাজার ৫৯৫ পরিবার এবং লোহাগাড়ায় ৪ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক স্বাভাবিক হলেও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি সাতকানিয়া, বান্দরবান, চকরিয়া ও লোহাগাড়ার আংশিক এলাকায়। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও লোকালয় তলিয়ে আছে পানিতে। পানি সরে যাওয়ায় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন। তবে মহাসড়ক থেকে তুলনামূলক দূরে অবস্থিত গ্রামগুলোতে খাবারের হাহাকার আছে বলে জানান অনেকে। এই বন্যায় শত শত মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে এবং বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হওয়ায় বুধবার দুপুর থেকেই সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করে। রাতের মধ্যে মহাসড়কে সাতকানিয়ার কেরাণীহাটসহ বিভিন্ন অংশ থেকে পানি পুরোপুরি নেমে যায়। এর ফলে দুদিন পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে সাতকানিয়ার বাজালিয়া এখনো পানি পুরোপুরি নামেনি। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি।

চন্দনাইশে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর আবু সৈয়দ নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দোহাজারীর জামিজুরী এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এর একদিন আগে বিকালে ওই বৃদ্ধের ১০ বছর বয়সি নাতি আনাছের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। তারা চন্দনাইশে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখে গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিখোঁজ হয় দাদা আবু সৈয়দ (৮৩) ও নাতি আনাছ (১০)। পরবর্তীতে ঢলের পানি কিছুটা কমায় একদিন পর নাতির লাশ পাওয়া যায়। তারও একদিন পর একই জায়গা থেকে দাদার লাশও উদ্ধার করা হয়। চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাতকানিয়া থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করার মধ্যেই আবার আমিলাইশ, দক্ষিণ ঢেমশাসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে ডাকাতদের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতদল হানা দিয়েছে বলেও জানা গেছে। দক্ষিণ ঢেমশা এলাকায় এভাবে ডাকাতদল হানা দেয়ার পর মসজিদের মাইক থেকে তা এলাকাবাসীকে সজাগ করা হলে ডাকাতদল পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

সাতকানিয়া সংবাদদাতা নাজিমউদ্দিন জানিয়েছেন, এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা তারা শুনেছেন, তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি নিজেও কেরানীহাটে এসে একটি দোকানে বসে তার মোবাইলে চার্জ দিয়ে কথা বলছিলেন।

এদিকে সাতকানিয়ায় বাজার করতে বেরিয়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে যাওয়া মোহাম্মদ ইদ্রিসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাজার করতে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সাতকানিয়া সরকারি কলেজের সামনে বন্যার পানিতে পড়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান তিনি। ইদ্রিস পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড গোয়াজর পাড়ার বাসিন্দা। এদিকে কাঞ্চন ইউনিয়নের মিয়া বাড়ির আরিফ মইনুদ্দিনের শিশুকন্যাও পানির স্রোতে ভেসে গেছে গত সোমবার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। চরতি এলাকায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App