×

সারাদেশ

বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম

বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর!
বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর!

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বেচাকেনার অভিযোগ এসেছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীরা ঘর প্রতি ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রয় করছেন।

প্রথম পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয় উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামে। জনপ্রতি ০২ শতাংশ জমিসহ একটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ছিলো এক লাখ ৯১ হাজার টাকা। এই ৫০টি ঘর থেকে প্রায় ১০টি ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা বলছেন ক্রেতারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারের উপহারের ঘর পাননি প্রকৃত ভূমিহীনরা। জমি আছে, পাকা ঘর আছে, গাড়ি আছে এমন ব্যাক্তিরাও পেয়েছেন ভূমিহীনদের ঘর।

সেখানে গিয়ে দেখা যোয়, প্রকল্পের ২৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান ও মমেনা খাতুন দম্পতি। চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এ ঘর ৫০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন সোকজান বেগম। ৩২ নম্বর ঘর বরাদ্দ হয়েছে রমিছা বেগমের নামে। সরকারি বিভিন্ন নথিতে তার নাম রয়েছে। অথচ ঘরটিতে এখন বসবাস করছেন আফাজ উদ্দিন ও আকতারা দম্পতি, বর্তমানে ঘরে বসবাস করা আকতারা বেগম জানান, চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ৯৫ হাজার টাকায় তিনি রমিছা বেগমের কাছ থেকে ঘর কিনেছেন।

২৫ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুফিয়া খাতুন ও নুর ইসলাম দম্পতি। তাদের কাছে থেকে ৫৫ হাজার টাকায় ঘরটি কিনে বসবাস করছেন শাহ আলম ও তার পরিবার। ৫০ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সুরুজ্জামান আলী ও তার স্ত্রী হালিমা খাতুন। তাদের কাছে এ ঘর ৫৭ হাজার টাকায় কিনে বসবাস করছেন মহোছেনা বেগম ও মমিনুর রহমান দম্পতি। ৪৪ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন লিটন ইসলাম। তার কাছে থেকে ৫৫ হাজার টাকায় ঘরটি কিনে সেখানে বসবাস করছেন জাবিতন বেগম ও তার পরিবার।

একইভাবে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১২,৩০,৩৩,৩৭ ও ৩৯ নম্বর ঘর টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন উপকারভোগীরা। আর এসব ঘর যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তারা এখন কেউ এখানে থাকেনা। যারা টাকা দিয়ে কিনেছেন তারাই এখন বসবাস করছেন।

এসব ঘরে বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কিনে নেয়ার কথা স্বীকার করেন বলেন, তাদের কোনো বাড়িঘর ও জমিজমা নেই। আবেদন করেও তারা সরকারের ঘর বরাদ্দ পাননি। তাই নিরুপায় হয়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কাছে থেকে ঘর কিনে বসবাস করছেন।

২৬ নম্বর ঘর কিনে বসবাস করা সোকজান বেগম বলেন, তার ঘরবাড়ি নেই, জমিও নেই। ভিক্ষাবৃত্তি করে খেয়ে না খেয়ে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে তিনি সিদ্দিকুরের কাছ থেকে এই ঘর কিনেছেন।সিদ্দিক তাঁর নামে চুক্তিপত্র করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সোকজান।

৫০ নম্বর ঘর কিনেছেন মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, বরাদ্দের জন্য আবেদন করেও ঘর না পেয়ে বাধ্য হয়ে কিনেছি।কারন, পরিবার নিয়ে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই আমার। তিনি জানান, প্রথমে ঘর বাবদ ৫৭ হাজার টাকা ও পরে টিউবওয়েল বাবদ আরো ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন ঘরের মালিক সুরুজমানকে।

এছাড়া, টাকা দিয়ে ঘর কেনার কথা স্বীকার করেছেন শাহ আলম, আকতারা বেগম, জাবিতন ও ইয়াসমিন। তারা বলেন, টাকা দিয়ে ঘর কিনে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু বরাদ্দপ্রাপ্তরা ঘর বিক্রি করে চলে গেলেও সরকারি সকল সুবিধা ও প্রশিক্ষণ এখনও তারাই পাচ্ছে । অথচ প্রকৃত ভূমিহীনরা সরকারের এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২৫ নম্বর ঘরের বরাদ্দ পাওয়া নুর ইসলাম ঘর বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, শাহ আলম ভূমিহীন। আমার যেহেতু বাড়িঘর আছে, তাই ৪০ হাজার টাকায় তার কাছে ঘরটি বিক্রি করেছি।

আশ্রয়ণের বাড়ি বিক্রি করা করে আরেক উপকারভোগী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিক্রি করিনি তবে আমি যেহেতু ওই বাড়িতে থাকি না, তাই বাড়িটি থাকতে দিয়েছি। লিখিত চুক্তিপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

ঘর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, সে সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্যরা তালিকা করেছিল। তাদের দেয়া তালিকা আমি শুধু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছি। তারাই যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করেছিল।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি বরাদ্দ ও তালিকা প্রণয়ন করেছেন উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি। আমরা শুধু তালিকা অনুয়ায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। ঘর বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ঘর বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App