×

সারাদেশ

পুলিশ সদস্য যখন ফাঁড়ির হর্তাকর্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম

পুলিশ সদস্য যখন ফাঁড়ির হর্তাকর্তা

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস। ছবি: তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

সবই ওসি স্যার জানে, সার্কেল স্যার জানে, এখানে কমিশনের ব্যবসা সবাইকে ভাগ দিয়ে খাই আমরা। এবার মাঠে খেলার জন্য নেমেছি, কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না এমন দাম্ভিকতায় চলেন সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস।

অভিযোগ রয়েছে ক্যাম্প ইনচার্জকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন নিরীহ মানুষকে হয়রানি করেছে চলেছেন পুলক বিশ্বাস। এদিকে পুুলিশী হয়রানির শিকার হয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন একই এলাকার উত্তম পালের স্ত্রী পুষ্পা রানী পাল।

তার লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট বিকালে প্রতিবেশী এক ছাত্রদল নেতার সাথে ম্যাসেজ্ঞারে কথাকাটি হয় ছেলে দীপু পালের সাথে। পরবর্তীতে তার কাছে খলিষখালী কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি জানিয়ে মাপ চান তিনি। এছাড়া তার ছেলেকে ডেকে মাফ চাওয়ার জন্য বাজারে আসতে বলেন। ওই সময় ছত্রদল নেতার ইন্ধনে কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ ছাড়াই তাকে আটক করে মারপিট করেন পুলিশ সদস্যসহ ওই ছাত্রদল নেতা। ছেলে খুঁজে না পেয়ে পুলিশের কাছে গেলে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

ওই রাতে খলিষখালী কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি গৌতম ঘটকের কাছে গেলে তিনি পুলিশ সদস্যদের ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানালে অপমান করে বসেন ওই পুলিশ সদস্য।

তিনি আরও বলেন, উপায় না পেয়ে তিনি পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে তখন পুলক বিশ্বাস তার কাছে দুই লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করে বসেন। দাবি মত টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে জানায় তারা। পরবর্তীতে ৮ আগস্ট সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মধ্যস্ততায় ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন ছেলেকে। ওই সময় পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস টাকা পয়সা লেনদন হয়নি মর্মে মিথ্যা ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন তিনি।

খলিষখালী ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি জাকির মোড়ল জানান, গত ৩ আগস্ট রাতে তার গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ইঞ্জিন ভ্যানযোগে তালার দিকে ফেরত পাঠান। পথিমথ্যে খলিষখালী বাজারের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস ও সহকারী উপ পরিদর্শক আবু রাসেল গরুর গাড়িসহ তিনজনকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা ঘুসের দাবি করে বসে ওই পুলিশ সদস্য। দাবিমত টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে গরুচুরির মামলায় ফাঁসাবে বলে হুমকি দিতে থাকে পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস। পরিবর্তীতে ১০ হাজার টাকা ঘুস দিয়ে পার পেয়ে যান ওই যাত্রা।

খলিষখালী এলাকার শওকত মোড়লের ছেলে জুয়েল মোড়ল জানান, মাস খানেক আগে তাকে গাঁজা খাওয়ার অভিযোগ এনে ক্যাম্পে আটক করে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস। পরে তার কাছ থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ভিডিও ধারন করে ছেড়ে দেয়।

খলিষখালী কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি গৌতম ঘটক জানান, বেশ কিছুদিন ধরে খলিষখালী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে আনে তারা। তারপর ওসি সার্কেলের দোহাই দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আবার ছেড়ে দেয়। এরপর প্রমাণ লোপাট করতে ভিডিও চিত্র ধারন করে রাখে। আমরা কোন কথা বলতে চাইলে তারা অপমান করার চেষ্টা করে। এছাড়া গভীর রাত পর্যান্ত ফাঁড়িতে নাশকতা মামলার আসামিদের আনাগোনা দেখা যায় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি বিষয়টা তারা দেখছেন। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবিসহ পুলিশ ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে জেলা পুলিশ সুপারের সুদৃৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সদস্য পুলক বিশ্বাস বলেন, আমি কনোস্টবলের চাকরি করি কোন অফিসার না। আমি কোন অনৈতিক কাজ করি না। তার বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সিনিয়ার অফিসারদের সাথে কথা বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আতিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App