×

সারাদেশ

ভাসমানরা পেল ঠিকানা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩২ পিএম

ভাসমানরা পেল ঠিকানা

ছবি: ভোরের কাগজ

সন্তানরা শিক্ষিত হবে, স্বপ্ন শাহিনা আক্তারের

মেঘনা নদীর পাড়ে ছিল বাড়ি। দশ বছর আগে নদীর বুকে বিলীন হয়ে যায় ঘর-ভিটা। সেই থেকে ঠিকানাবিহীন ভাসমান বাক প্রতিবন্ধী ময়ুরী বেগম। স্বামী শেখ আহমদের সঙ্গে কুড়েঘরে ঘর বেঁধে নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ বেড়িবাঁধের নিচে। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় স্বামী । তখন তার গর্ভে একটি সন্তান। স্বামীহারা আশ্রয়হীন ময়ুরীর জন্ম দেন এক বোবা সন্তান। ভাসমান হয়ে পড়ে ময়ুরী। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ ও ভিক্ষা করে বোবা মেয়েকে নিয়ে জীবন চালাতেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী-আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দশ নম্বর বাড়ির মালিক।

ময়ুরীর মতো এমন ভূমি ও গৃহহীন ৫০ পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা হলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। প্রতিটি পরিবার পেয়েছে দুই দশমিক দুই শতাংশ জমিতে টিনশেড আধা-পাকা বাড়ি।

দশ নম্বর বাড়ির সামনে গতকাল দুপুরে দেখা হয় ময়ুরী বেগম ও তার বোন রুজিনা বেগমের সঙ্গে। রোজিনা বেগম বলেন, আমার বোন ও তার মেয়ে দুইজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়ে গর্ভাবস্থায় থাকার সময তার স্বামী মারা যায়। কাজ ও ভিক্ষা করে নিজেরা চলত। নিজেদের জায়গা-জমি-ঘর-বাড়ি কিছুই নেই।

আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরজমিনে দেখা যায়, বাড়ি পাওয়া নারী-পুরুষেরা ঘর গোছাতে ব্যস্ত। এখানে ৪৬ নম্বর ঘরে বোবা স্বামীকে নিয়ে ঘর সাজানোর নতুন স্বপ্ন দেখেন শাহিন আক্তার (৩০)। তিনটি ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চান তিনি। শাহিন আক্তার বলেন, আমার স্বামীর কোনো ঘরভিটা নেই। কোনো রকমে বিভিন্ন জায়গায় থাকতাম। এই ঘরটা পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমার ছেলে দুটি নিয়ে এই জায়গায় থাকতে চাই। আমার মা-বাপ নেই-, একটা ভাইও নেই। জমি বর্গা নিয়ে সংসার চালাই। এই ঘর পেয়ে আশায় বুক বেধেছি। বোবা স্বামী নিয়ে ঘর-সংসার করব। ছেলেগুলো স্কুলে পাঠাবো।

পড়াশোনার জন্য এখানেই নিয়ে আসব। এই ঘরটা পেয়ে আমার ছেলেগুলোকে মানুষ করতে পারব। ছেলে দুটিকে পড়াশোনা করাতে চাই।

এই প্রকল্পের ৩০ নম্বর ঘরে থাকেন খোরশেদ আলম। সেমি পাকা তিন রুমের নতুন ঘর। সামনের দরজায় টাঙ্গানো সুন্দর নকশা করা পর্দা। তিনি বলেন, আগে কাঁচাঘর ছিল। প্রধানমন্ত্রী পাকা ঘর দিয়েছেন। কখনো স্বপ্ন দেখিনি একটি পাকা বাড়িতে থাকব।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশের গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এখানে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের কারোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। অনেককে দেখতাম, বস্তি ও বাস্তুহারাদের এলাকায় (মাইজদি চৌমুহনী এলাকা) থাকত। ব্রিজ ও রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে থাকতো। ওরাই এখানে ঘর পেয়েছে। এই মানুষরা স্থায়ী আশ্রয় পেল। রাস্তা, নলকূপ তৈরি করে দিল সরকার।

তবে এই এলাকার পানি আর্সেনিকযুক্ত। তাই নলকূপ থাকলেও সুপেয় পানির অভাব। তাই এই প্রকল্পে আর্সেনিক ‘রিমুভেবল’ প্ল্যান্ট বসানোর আবেদন জানান ১ নম্বর আমান উল্লাহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাহরুল আলম। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন , সবচেয়ে বেশি ভূমিহীন মানুষ বাস করে আমাদের ইউনিয়নে। আমার ইউনিয়নের ৪৫ জন ভূমিহীনকে এখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের জনসম্পদে রুপান্তর করতে চাই। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুই বিষয়ের উপর আমরা জোর দেব। তবে এই একালার পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি। সুপেয় পানির অভাব আছে। তাই আর্সেনিক দূরীকরণে একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের আবেদন জানাচ্ছি।

এই বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। চার পর্যায়ে এই উপজেলায় ২৫৪টি বাড়ি নির্মাণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে এই প্রকল্পের আওতায় ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মাধ্যমে এই উপজেলায় কোনো গৃহহীন থাকবে না। এরপরও যদি কোনো ভূমিহীন কিংবা গৃহহীন পাওয়া যায়, তাহলে পর্যায়ক্রমে তাদেরও পুনর্বাসন করা হবে।

বাড়ি পাওয়া মানুষদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়েও নজর দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু বাড়ি নয়- কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সুপেয় পানির জন্য নলকূপ বসানো হয়েছে। তবে ভূ-প্রকৃতিগত কারণে এই অঞ্চলে আর্সেনিক বা আয়রণমুক্ত পানি পাওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আর্সেনিক সমস্যা থাকলে গভীর নলকূপ বসানো হবে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App