×

সারাদেশ

টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে উপকূলের বাসিন্দারা, চলছে না রান্না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম

টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে উপকূলের বাসিন্দারা, চলছে না রান্না

টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে উপকূলের বাসিন্দারা। ছবি: আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে উপকূলের বাসিন্দারা, চলছে না রান্না

প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা সমুদ্রে সৃষ্ট কোন বন্যা শুরু হলেই উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকে। কখন যেনো প্রলয়ঙ্করী দূর্যোগ এসে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

পটুয়াখালীর উপকূল এলাকায় চার দিনের একটানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। উত্তাল সমুদ্রে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে উপকূলের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। অনেক বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। রীতিমতো উপকূলের কর্মজীবি মানুষের স্বাভাবিক জীবনমান স্থবির হয়ে পড়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ সমুদ্র উপকূলজুড়ে টানা চারদিনের বৃষ্টির প্রবাহে নিম্নাঞ্চল ২-৩ ফুঁট পানির নিচে। একটানা বৃষ্টির প্রভাবে পানির উচ্চমাত্রা ক্রমান্বয় আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কুয়াকাটা উপকূলের সমুদ্র কেন্দ্রীক বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার কবলে পরে সীমাহীন দুর্দশায় নিমজ্জিত হয়েছে। উপকূলের বাসিন্দাদের বসতি, রান্না ঘর থেকে শুরু করে শৌচাগার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সকল অসচ্ছল অনেক পরিবারে নেই রান্না করার মতো কোনো উপায়। রান্না করতে না পেরে কেউ কেউ কাঁচা চাল ও পানি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

উপকূলের বসতি থেকে সামান্য কয়েক মিটার দূরে সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। যে কারণে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। উপকূলের ভূমিহীন হামেদ পহলান বলেন, একদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা, অপরদিকে সমুদ্রের জোয়ারের পানি তাদের বসত ঘর ছুঁইছুঁই যেনো মরণ ফাঁদে ফেলেছে।

সমুদ্রের যেকোনো বন্যা অথবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এলেই হাজারো মানুষের নেই আর শেষ রক্ষা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ রকম হাজারো মানুষ।

উপকূলে বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শিকার ৯৫ ভাগ মানুকলাষ ভূমিহীন। এদের নেই কোনো স্থায়ী বসবাসের জমাজমি। অসহায়ত্বের বেড়াজালে কোথাও যেতে পারছেন না তারা। তাই নিরুপায় হয়ে শত ঝড়-বন্যা উপেক্ষা করে বাধ্য হচ্ছেন এসবের মধ্যে বসবাস করতে।

উপকূলে ভূমিহীন অর্ধ শতাধিক বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সরকারের মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া আমাদের বিকল্প অবলম্বন নেই। সমুদ্রের পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করে, আমাদের ঠাঁই নেয়ার মতো কোন স্থান নাই। দুই শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বেড়িবাঁধের বাহিরে বসবাস করে।

এসব বাসিন্দাদের দাবি, উপকূলের অসহায় মানুষের জন্য জমি ও ঘর বরাদ্দের মাধ্যমে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। মজিব বর্ষের জমি ও ঘর দেয়া হলেও তারা এখনও বঞ্চিত রয়েছেন তারা।

এদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে গভীর সমুদ্রের শত শত মাছ ধরা ট্রলার আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে আশ্রয়ে রয়েছে। ১০-১২ দিন ধরে অপেক্ষা করছে অনুকূল আবহাওয়ার জন্য।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় শতাধিক মাছধরা ট্রলার আন্ধার মানিক মোহনা সংলগ্ন সমুদ্রে গিয়ে আবার বন্দরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। প্রচন্ড উত্তাল সমুদ্রে ঝড়ো বাতাসে টিকতে পারছিল না। আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দর আড়তদার সমিতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসায় ধস নেমেছে। তবে এর ভিন্নতাও রয়েছে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কিছু পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে পর্যটকদের সচেতনতায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতি। এছাড়াও বেড়িবাঁধের মধ্যে যেসকল নিম্নাঞ্চল রয়েছে তাও প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাসিন্দাদের ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। অনেক মাছের ঘেড় ও পুকুর বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা। আর কিছুদিন এভাবে একটানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষি কাজসহ পরিবেশ এবং মানুষের ক্ষতির সীমা থাকবে না। তা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App