লামায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পানি বন্দি প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
লামায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পানি বন্দি প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ । জামাল উদ্দীন, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
ছয়দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে লামায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় রূপধারণ করেছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের সকল অফিস-আদালতসহ সরকারি সকল দপ্তর পানির নিচে ডুবে আছে।
তলিয়ে গেছে বাজার, বাড়ি-ঘর, মাছের প্রজেক্ট, আবাদকৃত কৃষিজমি ও বীজতলা। এদিকে বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। চাপা পড়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। তবে এতে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় লামা-আলীকদমের সাথে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে লামা মাতামুহুরী নদীর পানি।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, গত দুইদিন ধরে লামা পৌরশহরসহ উপজেলার সকল সরকারি দপ্তর পানির নিচে। বিভিন্ন স্থানে ৫২টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক স্থানে মানুষ ঘরের মধ্যে আটকরা পড়েছেন। পরে তাদেরকে ঘরের চাল কেটে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউএনও মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, লামা পৌরসভা ও উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৫৫টি প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের জন্য রাতে খিচুড়ি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আশ্রয় কেন্দ্রে উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে বাহির থেকেও খাবার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লামা পৌর শহরের নয়াপাড়া, টিএন্ডটি পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পাহাড় পাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকা, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লামা-আলীকদম সড়কের লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, শিলেরতুয়া, কেরারঝিরি, দরদরাঝিরি এলাকায় রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতি বৃষ্টির ফলে মাতামুহুরী নদীসহ লামার সব কয়টি খালে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, লামা পৌর শহরে চেয়ারম্যান পাড়া ও নয়া পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের বড় মুসলিমপাড়া এবং সরই আন্ধারিসহ এলাকায় কয়েক স্থানে পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। রবিবার সকাল থেকে কখনো হালকা কখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
লামা এনজেড একতা মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারা বেগম জানান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ফাতেমা পারুল ও এনজেড একতা মহিলা সমিতির উদ্যোগে লামায় পানি বন্দিদের মাঝে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ চলছে। পানি বন্দি মা ও শিশু উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে আনতে কাজ করছে সংস্থার সাহায্যকর্মীরা।
লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় লামা ‘কার্যত বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। পৌরশহরের শহরের অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে হোটেলে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলায় শনিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রয়েছে। ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে লামা বাজার। বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পাহাড় ধসে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে।