×

সারাদেশ

দুদিন টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম

দুদিন টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা

গত দুই দিন টানা বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের বাসিন্দাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে ও তাদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ জারি করেছেন রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসন। টানা বর্ষণের কারণে এই নির্দেশনা জারি করেন রাঙ্গামাটির নবাগত জেলা প্রশাসন মো মোশারফ হোসেন খান।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সকাল ছয়টা থেকে আজ শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৩৩ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটি জেলায় ১৫০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়কের ওপর মাটি ধস ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটি শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, লোকনাথ মন্দির, ভেদভেদি মুসলিম পাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনদের মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান আজ সকালে রাঙ্গামাটির ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন । এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম ফেরদৌস ইসলাম, অকিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হাসান সহ প্রশাসনের লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পাহড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাঙ্গামাটি শহরের ৯ ওয়ার্ডে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মো মোশারফ হোসেন খান জানান, টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি রয়েছে। বিকাল থেকে বৃষ্টিপাত আরো বাড়তে পারে। এই জন্য রাঙ্গামাটি পৌর এলাকা ও উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও একই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে যাতে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে। তিনিবলেন, আমি চাই না দূর্যোগের কারণে কারো কোন ক্ষতি হোক। কেউ আহত বা নিহত হোক সেটা আমরা কোন ভাবেই কামনা করি না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনকে বিকেল চারটার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র অথবা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে হবে। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে থাকা খাওয়া সহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এছাড়া আমরা সবাইকে মাইকিং করে সর্তক করছি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে রাঙ্গামাটি জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সবাইকে নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কট্রোল রুম)। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: ০১৮২০-৩০৮৮৬৯, ০১৮৯৪-৯৫০১০৬।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মাঝারি ও ভারী বর্ষণের ফলে রাঙ্গামাটি জেলাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কের আশপাশের পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকায় আমরা আমাদের জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রেখেছি। যাতে করে কোনো ঘটনার পরই তড়িৎভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

এদিকে, রাঙ্গামাটি আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার ক্য চিং নু মারমা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। আজ (শুক্রবার) সকাল ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সে বছর রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি অংশ ধসে সপ্তাহব্যাপী সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে আরো ১১ জনের প্রাণহানি হয়। পরবর্তী বছর কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানি হয়। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়ে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App