×

সারাদেশ

কালুরঘাট সেতু বন্ধ, ফেরি স্বল্পতায় দীর্ঘ যানজট-ভোগান্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০২ পিএম

কালুরঘাট সেতু বন্ধ, ফেরি স্বল্পতায় দীর্ঘ যানজট-ভোগান্তি

ছবি: ভোরের কাগজ

কালুরঘাট সেতু বন্ধ, ফেরি স্বল্পতায় দীর্ঘ যানজট-ভোগান্তি

ছবি: ভোরের কাগজ

কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর সংষ্কারের জন্য মঙ্গলবার ১ আগষ্ট থেকে পরবর্তী তিন মাস সেতুর ওপর দিয়ে রেলসহ সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে ফেরী সার্ভিস চালু হয়েছে ঠিকই. তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। পাশাপাশি পল্টুনে উঠতে যে সংযোগ সেতু করা হয়েছে তা জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ফেরি পারাপারকারি যানবাহন ও যাত্রীদেরকে। মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ শুরুর আগে সংস্কার কাজের জন্য আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে এই কালুরঘাট সেতু।

মঙ্গলবার (১ আহস্ট) কর্ণফুলী নদীর ওপর এ সেতুর দুই প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেতুর দুই পারে এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, মেরামত কাজের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে ফেরি চালু করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। শুরুতে তারা জানিয়েছিল, একইসঙ্গে একইসময়ে দুইটি ফেরি চলাচল করবে। আরেকটি ফেরি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কিন্তু মঙ্গলবার চালু হয়েছে মাত্র একটি ফেরি। ফেরীতে ধারনক্ষমতা কম থাকা এবং টোল আদায়ে ধীরগতির কারনে দীর্ঘ লাইন পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড যানজটের। নদীর অপর তীর বোয়ালখালী প্রান্তেও একই অবস্থা।

দু’টি ফেরির বদলে একটি ফেরি ও ভোগান্তির ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বললেন, প্রথমদিনে একটি চালু হয়েছে। আরেকটিও হয়ে যাবে। একটু সময় দেন। আশাকরি ভোগান্তি থাকবে না। ফেরির পল্টুন পানিতে ডুবে যাওয়া ও টোলবক্সে ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ পূর্ণিমার কারণে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেশি। ভাটার সময়ও পানি থাকছে। তাই এই সমস্যা হচ্ছে। পূর্ণিমার জোয়ার শেষ হলে এই সমস্যা থাকবে না। টোলবাক্সের বিষয়টাও এরই মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

[caption id="attachment_452625" align="aligncenter" width="1082"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলে। চট্টগ্রাম থেকে যখন কক্সবাজারে ট্রেন যাবে, এই কালুরঘাট সেতু দিয়েই কর্ণফুলী পার হতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালুর আশা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে রেলস্টেশন নির্মাণসহ প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু শতবর্ষী এ জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে রেল চালুর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়াতে সেতুটি সংষ্কারের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করত দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেয়ার জন্যও এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলত।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানিয়েছেন, সেতু সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সেখানে নেয়া হয়েছে। মোবিলাইজেশনের কাজও আজ-কালের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। বুধবার থেকে সেতু ও রেললাইনের বিভিন্ন অংশ সংস্কারের জন্য ভাঙার কাজও শুরু হয়ে যাবে।

১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীগন নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তোদেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। কিন্তু নতুন কালুরঘাট সেতু আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। পুরাতন সেতুটিকেই এখন মেরামত করা হচ্ছে কক্সবাজারে রেল চালুর জন্য। অবশ্য নতুন একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প সরকার গ্রহন করেছে। যেটি নানা জটিলতায় শুরু করা যাচ্ছেনা। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি পরও সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া ঝুলে থাকা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ আছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে। গত মে মাসে চট্টগ্রামে এক সভায় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভের মুখে রেলসচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেছিলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে কালুরঘাটে নতুন সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণ হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App