×

সারাদেশ

উত্তাল সমুদ্রে টিকতে পারছেন না জেলেরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:২৫ এএম

উত্তাল সমুদ্রে টিকতে পারছেন না জেলেরা

ছবি: ভোরের কাগজ

তীরে ফিরছে ইলিশশূন্য নৌকা

বঙ্গোপসাগর আকস্মিক উত্তাল হয়ে উঠেছে। গভীর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে টিকতে না পেরে জেলেরা তীরে ফিরে এসেছেন। কুলে ফিরে আসা জেলেদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের সন্ধানে সমুদ্রে গিয়েছিলেন জেলেরা।

জানা যায়, লাখ লাখ টাকা খরচ করে চাল, ডাল, তেলসহ মৎস্য সরঞ্জাম নিয়ে ১ সপ্তাহের জন্য ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যান জেলেরা। আশা ছিল ট্রলারবোঝাই করে ইলিশ নিয়ে তীরে ফিরবেন। বৈরী আবহাওয়া জেলেদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। সমুদ্র থেকে ইলিশশূন্য তীরে ফিরে আসতে হয়েছে জেলেদের। অন্যান্য মাছ কম বেশি ধরা পড়লেও কাক্সিক্ষত রূপালী ইলিশ ধরা পরেনি জেলেদের জালে।

নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই রাত ১২টার পর জেলেরা সমুদ্রে ছুটে যান রূপালী ইলিশ আহরণে। গভীর সমুদ্রে গিয়ে সোমবার একদিন মাছ শিকার করতে পারলেও হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েন জেলেরা। সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। জানমাল বাঁচাতে মাছ ধরা রেখে খাপড়াভাঙ্গা নদীর দুই ধারে শত সহ¯্র ট্রলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া বেশির ভাগ ট্রলারই শূন্য হাতে ফিরে এসেছে। জেলেদের আশা ছিল অবরোধ শেষে সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। আর সেই ইলিশ বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণসহ মহাজনের দেনা পরিশোধ করবেন। কিন্ত তাদের সেই আশা আর পূরণ হয়নি। উল্টো আরো দেনায় জর্জিরত হয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। এদিকে বৈরী আবহাওয়া অন্যদিকে ইলিশশূন্য সমুদ্র। এরপরও যেন জেলেদের ব্যবস্তার শেষ নেই। তীরে বসে ছেঁড়াফাটা জাল মেরামতসহ নানা ব্যস্ততায় দিন পার করছেন তারা। উপকূলীয় এলাকার মৎস্যবন্দরগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্যতা।

জেলে ও মৎস্যজীবীদের দাবি মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেয়া ৬৫ দিনের অবরোধ তাদের কোনো উপকারে আসেনি। উল্টো ফাঁকা সমুদ্রে ভারতীয় জেলেরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে অবরোধকালে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে গেছে। সমুদ্রে অসংখ্য দেশি-বিদেশি ট্রলিং জাহাজ মাছ ধরে নিয়ে গেলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। এতে দেশীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয়সহ বিদেশি জেলেরা মাছ ধরে নেয়ার ফলে সমুদ্র ইলিশশূন্য হয়ে পড়ছে। জেলেদের দাবি ভারতের সঙ্গে মিল রেখে অবরোধ দিলে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ সঠিকভাবে অবরোধ পালিত হবে। অন্যথায় সরকারের দেয়া ৬৫ দিনের অবরোধের সুফল ভোগ করতে পারবেন না জেলে মৎস্যজীবীরা।

জেলে তৈয়ব আলী বলেন, আমরা সাগরে যাওয়ার সময় মোহনা থেকে প্রচণ্ড তুফান দেখছি। ভাবনা ছিল গভীর সমুদ্রে ঢেউ কম থাকবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রেও তুফান এবং প্রচণ্ড ¯্রােত রয়েছে। তারপরও একবার জাল ফেলছিলাম। কিন্তু ঢেউয়ের ঝাঁপটায় সব জাল রশির সঙ্গে পেঁচিয়ে এবং ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। জাল ঠিক করতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

এফ বি তামান্না ট্রলারের মাঝি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ট্রলারে তৈল ও বরফ ভরে প্রস্ততি নেয়া ছিল। ২৪ জুলাই সকালে সমুদ্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাগর উত্তাল হওয়ার খবর পেয়ে আর যাওয়া হয়নি। মাছ ধরার উপযোগী হলে সমুদ্রে যাব। এফ বি বিসমিল্লাহ-১ ট্রলারের মাঝি একলাছ গাজী বলেন, ২৩ জুলাই গভীর রাতে আলীপুর ঘাট থেকে সমুদ্রে গিয়েছিলাম। ২৪ জুলাই দুপুরের জোয়ারে হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে দুই দিন ফিশিং করে ২৫ জুলাই রাতে ঘাটে এসে মাত্র এক লাখ টাকা বিক্রি করেছি। বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়েনি। ছোট ও মাঝারি সাইজের ইলিশ আছে, তাও পরিমাণে কম।

মৎস্যবন্দর আলীপুরের ব্যবসায়ী মনি ফিসের মালিক আ. জলিল ঘরামী বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সমুদ্রে গিয়েছিল। সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে ঘাটে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা শুধু খাবার মাছ পেয়েছেন। আমরা মৎস্যসংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সমুদ্রে ট্রলার পাঠিয়েছিলাম। শূন্য হাতে তীরে ফিরে এসেছে জেলেরা।

আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহম্মেদ জানান, অবরোধের পর ২৪-২৬ জুলাই পর্যন্ত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাঙ্ক্ষিত মাছ আসেনি। গত ৩ দিনে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির ২ মেট্রিক টন মাছ এখানে বেচাকেনা হয়েছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় খুবই কম।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, অবরোধ শেষে যেসব ট্রলার গভীর সমুদ্রে গিয়েছিল তা ঘাটে ফিরে এসেছে। সমুদ্রে প্রচণ্ড ঢেউ ও স্রোত রয়েছে। চলমান জোর প্রভাবে সমুদ্র অস্বাভাবিক উত্তাল। আগামী দুই-তিন দিনেও সমুদ্র স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাবস্যার জোর প্রভাব কেটে গেলে সমুদ্র স্বাভাবিক হবে। তখন জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App