×

সারাদেশ

ঢাকার পর চট্টগ্রামেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৪ এএম

ঢাকার পর চট্টগ্রামেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি

ফাইল ছবি

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ভয়াবহভাবে বেড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে চট্টগ্রামে। রাজধানী ঢাকার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ চট্টগ্রাম বিভাগে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন মারাত্মক রূপ ধারণ করছে তখন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু রাখাসহ ডেঙ্গু মোকাবিলায় বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সংক্রান্ত ১০টি নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি গতকাল সোমবার বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রোগটি আগের চেয়ে জটিল ও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। প্লাটিলেট কমে যাওয়ার পাশাপাশি রোগীদের বুকে ও পেটে পানি জমা, খিঁচুনি, বমি, মাথায় যন্ত্রণার মতো সমস্যা হচ্ছে। তাই ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলোয় বাড়তি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ২৯৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন, কক্সবাজার জেলায় ১৬ জন, বান্দরবনে ৩ জন, খাগড়াছড়িতে ১৪ জন, রাঙ্গামাটিতে ১৩ জন, ফেনীতে ২১ জন, নোয়াখালীতে ১৫ জন, চাঁদপুরে ৩৯ জন, ল²ীপুরে ৪১ জন, কুমিল্লায় ৩৪ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছর চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৪২৯ জন। চলতি বছর চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত ২২ জনই চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। বিভাগে চট্টগ্রাম জেলার পর আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এদিয়ে আছে চাঁদপুর, ল²ীপুর, কক্সবাজার জেলা।

গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ জন। এর আগে গত দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১১ জন এবং এর আগের দিন ২২ জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে শুধু চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৬২ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ২২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছেন ১৩ জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পরিস্থিতিতে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করে তুলেছি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. রাজীব পালিত বলেন, চমেক হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘোষণা করে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, শিশুদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আক্রান্ত হলে ১১ বছরের নিচের শিশুদের ঝুঁঁকি বেশি থাকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, জ্বর কমার পর ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা সময়কাল ডেঙ্গুরোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের অনেকের শরীরে লিভারে পানি জমা, রক্তচাপ কমে যাওয়া ও কিডনি কাজ না করাসহ বেশকিছু জটিলতা দেখা দেয়। রোগীদের এই সময়ে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে নানা কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কীটনাশক ছিটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে করপোরেশন। ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি মশার প্রজনন ক্ষেত্র থাকা ভবনগুলোতে অভিযান জোরদার করেছে চসিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App