×

সারাদেশ

দৌলতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: বাড়েনি সেবার মান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

দৌলতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: বাড়েনি সেবার মান

স্টাফদের দুর্ব্যবহার, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, রোগী আসলেই অন্যত্র পাঠানো, সিন্ডিকেট ওয়ার্ক সবই চলছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসা পরিসর বা অবকাঠামো বাড়লেও সেই তুলনায় সেবার মান বাড়েনি ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন গণমানুষেরও না সরকারেরও না, এটি এখন চলে সিন্ডিকেটে- এমন মন্তব্য করেন স্থানীয় এক তরুণ সাংবাদিক। যদিও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ বহু পুরনো। তবে একটুও কমেনি তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নানা অনিয়মে জর্জরিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বর্তমানে খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগের কথা জানান এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মেহেদী হাসান নামে সীমান্ত এলাকার এক তরুণ বলেন, অনেক অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে। কিন্তু চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে এখানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন এখানকার সেবার মান বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সব সময় দালালে ভরপুর থাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এখানে স্থানীয় সিন্ডিকেটের তৎপরতাও নতুন নয়, তবে দীর্ঘদিনের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছেন না কেউই। আরিয়ান আশিক নামে এক যুবক বলেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জেলার সর্ববৃহৎ এই উপজেলার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কাগজপত্রের বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন স্থানীয় সাংবাদিক সজল বিশ্বাস। দুর্ঘটনায় পড়ে হাসপাতালে গিয়ে ২০ মিনিট পর প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়েছেন, এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান পিয়াস আহমেদ নামে এক যুবক। সম্প্রতি একজন সম্প্রচার সাংবাদিকের করা সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে মন্তব্য জানাতে ভিড় করেন অনেক ভুক্তভোগী মানুষ। পোস্টটিতে ওই সাংবাদিক এক যুগের নানা তুলনার চিত্র তুলে ধরে জনমতামত চান।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লেশমাত্র নেই দৌলতপুরের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরিচ্ছন্নতার দাম এখানে কানাকড়ি। যুগান্তরেও বদলায়নি খাবার আর শুশ্রুষা। অধিকাংশ ভুক্তভোগী মানুষের বক্তব্য একসঙ্গে করলে মোটা দাগে দাঁড়ায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে আন্তরিকতা ও হৃদ্যতার প্রচণ্ড অভাব বিদ্যমান। রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এখানে নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হওয়ায় অসন্তোষের শেষ নেই। এছাড়া, এটা নেই, ওটা নেই বলে রোগীদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচারের বিষয়টি এখন পুরনো ঘটনা। যা ভুক্তভোগীদের কাছে পুরোপুরি গা সওয়া হয়ে গেছে।

অন্যদিকে ফিলিপনগর ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিও এখন নেই বললেই চলে। ওই এলাকার আমিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, শুধু কাগজে-কলমে এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম চালানো হয়, কার্যত এখানে কোনো সেবাই দেয়া হয় না। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোরও প্রায় একই দশা বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলতি সপ্তাহে নিজের মামাকে চিকিৎসার অভাবে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলার এক সাংবাদিক নেতা। পাশাপাশি তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন ও তার সিন্ডিকেট এখানে টেন্ডার বাণিজ্য চালান। নিয়মনীতির বাইরে গোপনে টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি দেন। নিজের খেয়াল-খুশি মতো সবকিছু পরিচালনা করেন।

দৌলতপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর আগে একযোগে ১৮ জন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন। কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও যুক্ত করা হয়েছে। তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিসর বা অবকাঠামো বাড়ানো হলেও সেই অনুপাতে তেমন কোনো সেবা বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে রোগীদের নানামুখী বিড়ম্বনা। এক রক্ত পরীক্ষা করতেই দিনের পর দিন ঘুরতে হয় এখানে। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকদের ডিউটি নিয়েও। কেউ কেউ শুরু করেছেন নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। আবার অনেকের প্রাইভেট চেম্বারের দিকেই ঝোঁক বেশি। নানা অনিয়মে জর্জরিত এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান বলেন, কোন কোন স্টাফ রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তাদের নামসহ দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্। এখানে টেন্ডারের বিষয়ে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। ওপেন টেন্ডার হয়েছে। পরিচালনা কমিটির সম্মিলিত সিদ্ধান্তে টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App