×

সারাদেশ

সজিবের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ১০:২৪ পিএম

সজিবের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির দিন সজিব হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সজিব পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে- বিএনপি এমন দাবি করলেও তার শরীরে গুলির কোনো চিহ্ন পাননি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে।

এদিকে লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও নিহতের ঘটনায় সদর থানা চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার রাতে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় পুলিশের দুটিসহ মোট চারটি মামলা রুজু করা হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে প্রধান আসামি করে দুই মামলায় ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো তিন হাজার আসামিসহ চার মামলায় মোট তিন হাজার ৩৫৫ জনকে আসামি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাতে সদর থানা পুলিশের এসআই আনিছুর রহমান বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে। এই মামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পৃথক আরেক মামলায় সদর থানার এসআই মোজাম্মেল হোসেন বাদী হয়ে পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশকে আহত করার ঘটনায় বিএনপির এ্যানীকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০০ জনকে আসামি করেছেন। এছাড়া সজিব হত্যার ঘটনায় তার ভাই মো. সুজন হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে জেলার কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজুর লক্ষ্মীপুর শহরের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অপরদিকে এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সজিব দৌঁড়ে লক্ষ্মীপুর সদরের মদিন উল্যাহ হাউজিংয়ের একটি বাসার ভেতর ঢুকছেন এবং কিছুক্ষণ পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে সজিব ফ্ল্যাটের মালিক নোমানকে জানান, আর্থিক লেনদেন এবং টাকা-পয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল এবং তিনি বিএনপির কোনো মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি। এমনকি তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। এর আগে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে ঘটনা জানানো হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিত পুলিশ ওই বাসা থেকে সজিবের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, সেখানে পুলিশের কোনো গুলিতে কেউ মারা যায়নি। সজিব মারা গেছে ছুরিকাঘাতে। তার শরীরে চিকিৎসকরা চারটি কোপের চিহ্ন পেয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে সজিবের রক্তাক্ত দেহ। তদন্ত চলছে। তিনি জানান, পৃথক চারটি মামলায় মোট ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় উল্লেখিত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করছে, আর্থিক লেনদেন ও বিয়েসংক্রান্ত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন সজিব হোসেন। আর নিরীহ যুবক সজিবের লাশ নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই, পুরোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে শহরের শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসা থেকে পদযাত্রা বের করে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি জেলা শহরের সামাদ মোড়সংলগ্ন কলেজ রোড এলাকায় পৌঁছালে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে সজীব নামে এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিএনপির দাবি নিহত যুবক কৃষক দলের কর্মী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App