×

সারাদেশ

ফসলের মাঠে ৩৮ লাখ টাকার সেতু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম

ফসলের মাঠে ৩৮ লাখ টাকার সেতু

সুন্দর খাতা গ্রামে ফসলি মাঠে সম্প্রতি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামে ফসলি মাঠে সম্প্রতি ৩৮ লক্ষ টাকার একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

মাঠের ওপর দুই পাশে সংযোগ সড়কহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামে সার্ভেয়ার শাকিলের বাড়ির পশ্চিম পাশে ফসলের মাঠে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। কাজটি সম্পন্ন করেছেন ঠিকাদার নুর আলম।

সেতুর একপাশে বসত বাড়ি থাকলেও অন্যপাশে পাশে বিশাল ফসলের মাঠ । সামনে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই বসতবাড়ি । নেই কোনো জনসাধারণের চলাচল । ব্রিজটির ২০০ মিটার পূর্বে সুন্দরখাতা-ডিমলা পাকা সড়ক, এক কিলোমিটার দক্ষিণে মাইজালির ডাংগা সড়ক। আধা কিলোমিটার উত্তরে খোকসার ঘাট ব্রীজ ও পাকা সড়ক। এক কিলোমিটার সামনে বুড়িতিস্তা নদী ও বাঁধকাম রাস্তা। যা খোকসারঘাট ব্রীজের সংযোগ রাস্তার সাথে মিশেছে। নদীর ওপারেই ডোমার উপজেলা।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন তার বাড়ির পাশের ওই মাঠ থেকে ফসল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য সরকারি খরচে সেতুটি নির্মাণ করেছেন। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা নুরু মিয়ার ছেলে।

মাঠে কাজ করা কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ সেতুটি কোনো কাজে আসবে না। অপ্রয়োজনে সরকারের লাখ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে ।

সুন্দর খাতা গ্রামের বাসিন্দা আবদেছ আলী বলেন, সড়ক ও বসতি না থাকায় সেতুটি নির্মাণের শুরুতে কাজ বন্ধ করে নির্মানসামগ্রীর সব মালামাল ফেরত নিয়ে যায় প্রকৌশল অফিসের লোকজন। পরে শুনেছি অনেক তদবিরের পর আবার কাজ শুরু হয়।

মধ্যম সুন্দর খাতা গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, মানুষ নয়, গরু-মহিষ পারাপারের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আগে দেখতাম সড়ক নির্মাণ করে তারপর ব্রিজ বা কালভার্ট হতো। এ ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা।

একই গ্রামের ওয়াজেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, যেখানে দরকার সেখানে সেতু নির্মাণ না করে ফসলের ফাঁকা মাঠে করা হয়েছে। এটা হাস্যকর। সেতু এলাকায় কোনও বসতি নেই। মানুষও চলাচল করেনা। অথচ পাশের এই গ্রামে সহস্রাধিক মানুষের বাস। গ্রামের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে সড়কটি হাঁটু পানির নীচে থাকে। কালভার্ট না থাকায় বৃষ্টির পানির চাপে বারবার ভেঙে যায় সড়কটি।

এছাড়া পাশেই সিংগাহারা নদীর ওপর দুটি সেতু মাঝ বরাবর ডেবে হেলে পড়েছে । অন্তত পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতু দিয়েই যাতায়াত করছে। অতিপ্রয়োজনীয় এসব সেতু ও রাস্তা সংস্কার না করে কেন বা কার স্বার্থে সরকারি খরচে ফসলের ফাঁকা মাঠে সেতু নির্মাণ করা হলো তার সঠিক উত্তর জানা নেই গ্রামবাসীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দের অর্থ যাতে ফেরত না যায় সেজন্য ওই স্থানে সেতুটি দেওয়া হয়েছে। এখন রাস্তা নেই, ভবিষ্যতে হবে। নিজের পরিবারের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সে সময় অন্য কোথাও জায়গা খুজে পাইনি। তাছাড়া কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে।

উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলাম । বিষয়টি আমার জানা নেই । তারপরও রাস্তা ছাড়া কী কারণে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App