×

সারাদেশ

ডিমলায় অনুদানের ৫০টি গবাদিপশুর মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম

ডিমলায় অনুদানের ৫০টি গবাদিপশুর মৃত্যু
নীলফামারীর ডিমলায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিতরণ করা গবাদিপশুর ধারাবাহিক মৃত্যুর খবর আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। রুগ্ন ও হাড্ডিসার এসব পশু বিতরণের এক মাস না যেতেই প্রান হারাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাস করা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২০টি পরিবারকে ১টি করে গরু, ৪২টি পরিবারকে পশু পালনের ঘরসহ ৩টি করে ভেড়া, ৪২টি পরিবারকে ২টি করে ছাগল ও ৬২টি পরিবারকে মুরগি পালনের ঘর দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৪৫০ জন উপকারভোগী এ অনুদান পাবেন। তবে বিতরণের পর থেকে উপকারভোগীদের কেউ কেউ গবাদিপশু নিজ বাড়িতে নিতে না নিতেই মরতে শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি উপকারভোগী পরিবারকে সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ওজনের গরু দেয়ার কথা থাকলেও ৫০ থেকে ৬০ কেজি ওজনের ছোট ও রোগাক্রান্ত গরু দেয়া হয়। প্রতিটি ভেড়া ৭ কেজির জায়গায় ২ থেকে ৪ কেজি ও ছাগলের ওজন ৮ কেজির জায়গায় ২ থেকে ৩ কেজি ছিল। বিতরণকৃত পশুগুলো প্রকল্পের নির্ধারিত সাইজের চেয়ে অনেক ছোট। একাধিক স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অনুদানের পশু দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে। উপকারভোগীরা জানান, খুবই রুগ্ন ও হাড্ডিসার ছিল সরকারের দেয়া গবাদিপশু। বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক দামেও কেনা হয়নি এসব প্রানী। বাড়িতে আনার পর বেশিরভাগ পশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।অনেকের পশু মারা গেছে। উপকারভোগী ও চর প্রকল্পের মাঠকর্মী সুত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি , গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানি ইউনিয়ন ও ছিটমহলে অন্তত ৪০টি অনুদানের ছাগল-ভেড়া মারা গেছে। এসব গবাদিপশু বিতরণ করা হয়েছিল চলতি মাসের এপ্রিল ও মে মাসের শেষে। বিতরণের এক মাসের মধ্যে প্রাণী মারা গেলে নতুন প্রাণী সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৪ জন উপকারভোগীকে নতুন প্রাণী সরবরাহ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চর প্রকল্পের মাঠ কর্মীরা বলেন, প্রাণী মৃত্যুর সব তালিকা তারা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ঠাটারি পাড়া গ্রামের উপকারভোগী স্বপ্না বেগম বলেন, আমাকে যে দুটো ছাগল দেওয়া হয়েছিল তার ওজন ২ কেজির বেশি হবে না। অসুস্থ ছাগল দুটো বাড়িতে আনার ১০ দিনের মধ্যে মরে গেছে। অফিসের লোকজনকে জানালেও আমাকে বদলি ছাগল দেয়নি। একই এলাকার সোনালি বেগমের দুটি ছাগল, ছকিনা ও আমিনুর রহমানের একটি করে ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে। তারা জানান, যে ছাগল ও ভেড়া দেয়া হয়েছে তার ওজন ২-৩ কেজির বেশি হবে না। পরে জানতে পারলাম আমাদের সর্বনিম্ন ৮কেজি ওজনের পশু দেওয়ার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। তারা আমাদের সহজ সরল পেয়ে ঠকিয়েছে।তারাও মৃত প্রাণীর বদলি পাননি। রনজিৎ, শফিকুল, রশিদা সহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত আরও ১০ জন উপকারভোগী বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে লালন-পালন বিষয়ক কর্মশালায় তাদেরকে বলা হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মূল্যের উন্নত জাতের গরু দেয়া হবে। প্রতিটি গরু সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ওজনের হবে। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে কম ওজনের রুগ্ন ও হাড্ডিসার দেশি গরু। যার বাজার মূল্য হবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ছোট আকারের এসব গরুর বয়সও অনেক বেশি। এই গরু লালন পালন করে তাদের লাভ হবে না। তারা জানান, দামের সঙ্গে বিতরণকৃত গবাদি পশুর সামঞ্জস্য না পাওয়ায় অধিকাংশ উপকারভোগী সেগুলো নিতে চাননি। এ নিয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অনেক দেন দরবার করে এসব পশু নিতে বাধ্য করে। উপকারভোগীদের ভাষ্যমতে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের শর্তাবলি অমান্য করে কম ওজনের পশু উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করছেন। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার বলেন, দরপত্র অনুযায়ী ওজন কম থাকায় গরু বিতরন স্থগিত করেছিলেন। পরে উপকারভোগীদের দাবিতে কম ওজনের গরুই বিতরণ করা হয়েছে। আর ছাগল ও ভেড়া বিতরণের সময় প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ নন্দ দুলাল উপস্থিত ছিলেন। ছোট হলে উপকারভোগীরা তখন অভিযোগ করেনি কেন। এছাড়া জীবন্ত পশুর ওজন কমা-বাড়া ও মৃত্যু হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App