×

সারাদেশ

ইউএনও’র চাপে মায়ের সঙ্গে দেখা করলেন কোটিপতি ছেলে

Icon

মো: মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ১০:০৪ পিএম

ইউএনও’র চাপে মায়ের সঙ্গে দেখা করলেন কোটিপতি ছেলে

ছবি: সংগৃহীত

“ছেলের বাস অট্রালিকায়, জীর্ণ ছাউনিতে শতবর্ষী মা” শিরোনামে গত ১০ জুন জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে সংবাদটি প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনায় আসে বিষয়টি। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তীব্র সমালোচনা করতে থাকে কোটিপতি ছেলে মোতালেবকে নিয়ে। এসময় গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়ের নজরে আসে সংবাদটি। ওই দিন বিকেলেই ভোরের কাগজের স্থানীয় প্রতিনিধি প্রভাষক মাজেম আলী মলিনকে ডেকে নেন ইউএনও শ্রাবনী রায়। বিস্তারিত শোনার পরে মোতালেব হোসেনের চাঁচকৈড় বাজারস্থ ইসলামীয়া ফার্মেসিতে যান ইউএনও শ্রাবণী রায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে মোতালেবকে নিয়ে আসেন ইউএনও অফিসে। সেখানে আলোচনা শেষে শতবর্ষী বৃদ্ধার ছেলেকে বিষয়টি আপোষের জন্য দুই দিনের সময় দেন। তার বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসাসহ তার ভরণপোষনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন। অন্যথায় বিধি অনুযায়ী ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১ বছরের জেল দেয়ার কথাটি জানিয়ে সতর্ক বার্তা দেন ইউএনও। একইসাথে চাটমোহর উপজেলার ইউএনও মোছাঃ মমতাজ মহলকে বিষয়টি দেখার জন্য মোবাইল ফোনে অবগত করেন। চাটমোহর উপজেলার ইউএনও স্থানীয় ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য নির্দেশ দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ জুন সকালে তার বৃদ্ধা মা আমেনা বেগমের সঙ্গে শুন্য হাতে দেখা করেন একমাত্র কোটিপতি ছেলে মোতালেব। এসময় তার মা আমেনা বেগম তার নাতি মনিরুল ও ছেলের স্ত্রীকে দেখতে চান, যার কারণে ১২ জুন সকালে বৃদ্ধার ছেলে মোতালেব তার ছেলে মনিরুল ও স্ত্রী সহ তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কানাইয়ের চর গ্রামে যান। সেখানে তার ভাগনির রান্না করা মাংস-পায়েস খেয়ে কোন কিছু না দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যান বলে জানান ভাগনি রমেছার ছেলে সজিব(১৭)। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আব্দুল মোতালেব উত্তেজিত হয়ে বলেন, মা টা কি আমার না আপনার। আপনার এত মাথা ব্যথা কিসের? মায়ের সঙ্গে দেখা তো দেখা করেছি এটাই বড় কথা। আমি কি দিবো কি না দিবো সেটা আমার ব্যাপার। আমি ইউএন’র সঙ্গে দেখা করে উত্তর দিবো। আমি আপনার কাছে উত্তর দিতে বাধ্য নই। নাতনি রমেছা বেগম বলেন, মামা নানির কাছে এসেছিলেন এতেই আমরা খুশি। মরার আগে নানি তার ছেলের মুখ দেখেছেন এখন তিনি মরে গেলেও শান্তি পাবেন। গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় বলেন, মোতালেব হোসেনকে তার মায়ের ভরণ পোষণের জন্য যথেষ্ট বলা হয়েছে। এরপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ১১০ বছর বয়সের আমেনা বেগমের একমাত্র ছেলে আব্দুল মোতালেব তার মৃত মেয়ে হাজেরার কন্যা রমেছাকে ১০ শতক জায়গা লিখে দেয়ায় মা বাবার উপর অভিমান করে ২৫ বছর যাবত মা বাবার খোঁজখবর নেন না মোতালে হোসেন। ১০ বছর পূর্বে বাবা ওছমান মোল্লা মারা যাবার পর জানাজা শেষে মাকে ফেলে পাড়ি জমান নাটোরের গুরুদাসপুরে শশুর বাড়িতে। জানা যায়, চাটমোহর উপজেলার চর এনায়েতপুর গ্রামের আমেনা বেগমের একমাত্র ছেলে পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাচকৈড় বাজারে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বিশাল অট্টালিকায় বসবাস করেন। পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব দীর্ঘ ১০ বছরেরও অধিক সময় তার মায়ের কোনো খোঁজ রাখেন না। এমনকি মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি। বিষয়টি এলাকাবাসী ভালোভাবে নিতে পারেননি। ছেলে মোতালেবের এমন কর্মকাণ্ডের বিচার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেয়া হয়। ফেসবুকের সেই পোস্টগুলো মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। চারিদিকে বইতে থাকে নিন্দার ঝড়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App