×

সারাদেশ

সাড়ে ৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি শহর সুরক্ষা প্রকল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৮ এএম

সাড়ে ৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি শহর সুরক্ষা প্রকল্প

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পাশে বসবাসকারী পরিবার এবং বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন পদ্মা-মেঘনার ভাঙনে ক্রমশ বাস্তভিটা হারিয়ে নিস্ব হচ্ছে। ২০১৭ সালে এখানে স্থায়ী এবং শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে ‘চাঁদপুর শহর সুরক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরেও সেই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। এটি কবে বাস্তবে রূপ নেবে তা সংশ্লিষ্টদের কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ মেঘনা নদীর করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনা এবং ফসলি জমি। বর্তমানে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষায় ভাঙন রোধে দুই বছর আগে স্টাডির মাধ্যমে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা যাবে। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ব্লক ও জিওব্যাগ মজুত আছে। ভাঙন পরিস্থিতির অবনতি হলে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।

চাঁদপুর সদরে মেঘনা নদীর পশ্চিমে বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, আমাদের পুরো ইউনিয়ন পদ্মা ও মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার। প্রতি বছর বর্ষা এলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এ পর্যন্ত ৬ থেকে ৭ বার ভেঙেছে এই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। সরকার তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই জেলার মানচিত্র থেকে বিশাল জনগোষ্ঠীর এই ইউনিয়নটি হারিয়ে যাবে।

হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ঈশানবালা এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ঈশানবালার ভাঙন রোধে কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে প্রতিরোধ করলেও কোনো লাভ হয়নি। বর্ষা চলছে, ভাঙনের মাত্রাও বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বর্তমানে চাঁদপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে হাইমচর উপজেলা পর্যন্ত পদ্মা নদী ৫ কিলোমিটার এবং মেঘনা নদী ৫৮ কিলোমিটার। বর্তমানে ভাঙনপ্রবণ এলাকা প্রায় ১২ কিলোমিটার।

এ পর্যন্ত চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে নদী তীর সংরক্ষণ হয়েছে ২১.৫৮৯ কিলোমিটার। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ১০.৩০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে হানারচর থেকে হাইমচর উপজেলার নয়ানী পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমে ঈশানবালায় ৪.৩০০ কিলোমিটার এবং একই উপজেলার আলুবাজার এলাকায় ২ কিলোমিটার।

তিনি আরো জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুর পওর বিভাগ নদী তীর সংরক্ষণ কাজ করেছে ১৫.৫৩৯ কিলোমিটার। চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট এবং হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী কাটাখালী রক্ষা প্রকল্পে ১.৬০০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলমান আছে।

ইতোপূর্বে মেঘনার ভাঙন থেকে চাঁদপুর শহরকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্ষা বিভিন্ন চেহারা নিয়ে এলেও চাঁদপুরে আসে বিভীষিকা নিয়ে। ভাঙন শুরু হলে নদী প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুতির সময় দেয় না। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই, এই মুহূর্তে শহর রক্ষার কাজ শুরু করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের অবস্থান মেঘনার বাম তীরে, যেখানে মেঘনা ও পদ্মার প্রবাহ মিশেছে। সেই এলাকাটি অত্যন্ত প্রশস্ত এবং গভীর নদীর ভাঙনে শহরটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু শহরই রক্ষা পাবে তা নয়, মূল্যবান জমি ও সম্পদ বাঁচবে এবং নদী ভাঙন থেকে নদী তীরের বাসিন্দারাও রক্ষা পাবে। ফসল ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর জলজ বাস্তুসংস্থানের অবস্থার উন্নতি হবে। সর্বোপরি, কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে এখানে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App