×

সারাদেশ

মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশাল মেডিকেলের বার্ন ইউনিট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৩ এএম

মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশাল মেডিকেলের বার্ন ইউনিট

ছবি: সংগৃহীত

অভিজ্ঞ চিকিৎসক, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক অপারেশন থিয়েটার না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ চিকিৎসাসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। ফলে অগ্নিদগ্ধ জটিল রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। আর এখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারাও ধুঁকছেন দিনের পর দিন। সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারে দুই দফা বিস্ফোরণে দগ্ধদের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলেও তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে সচেতন মহলে রীতিমতো ক্ষোভ বিরাজ করছে। গোটা দক্ষিণের অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জীবন বাঁচাতে বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটির দিকে নজর দেয়ার দাবি জানান স্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি, বরিশালের সভাপতি ডা. সৈয়দ হাবিবুর রহমান।

সূত্রমতে, ২০১৫ দালের মার্চ মাসে চালু হওয়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চিকিৎসক শূন্যতার কারণে ২০২০ সালের ১৮ মে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর এখানে ৮১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হলে পুনরায় বার্ন ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঢাকা ও রংপুর থেকে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন রেজিস্ট্রার ও একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট যোগদান করার পর গত ২৩ মে থেকে পুনরায় চালু হয় এই ইউনিট। কিন্তু এ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান স¤প্রতি দুর্ঘটনায় আহত হলে আবারো মুখ থুবড়ে পড়ে ইউনিটটি। এখন রান্নায় দগ্ধ কিংবা চুলার আগুনে দগ্ধ যারা ভর্তি হচ্ছে তাদেরও সেবা এখানে সুনিশ্চিত নয় বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন।

নানাবিধ সংকটের কারণে শেবাচিমের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধ রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন। অনেক রোগী এখানে এসে ফেরত যাচ্ছেন। বিত্তবানরা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেলেও হতদরিদ্ররা এখানে এসে আহাজারি করছেন। অর্থের অভাবে ঢাকায় যেতে না পারা রোগীরা শেবাচিমের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া অগ্নিদগ্ধ রোগীরা জানান, এখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় চিকিৎসকরা প্রতিদিন একবার কোনোরকম রাউন্ডে এসে ওষুধ লিখে দেন। এরপর আর তাদের দেখা মেলে না। ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরাই রোগীদের একমাত্র ভরসা। তাই ভর্তি হয়ে কয়েকদিন ভোগান্তির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে রোগীদের হাসপাতাল ত্যাগ করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন আউট ডোর ও ইউনিটে মোট ৩২২ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বার্ন ইউনিটে প্রফেসর, রেজিস্টার, ২ জন সহকারী রেজিস্ট্রার ও ইএমওসহ ৬ জন ডাক্তার ও অন্তত ১০ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় অগ্নিদগ্ধ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এখানে কর্মরত ২৩ জন নার্সের মধ্যে ২১ জনেরই কোনো বার্ন প্রশিক্ষণ না থাকায় সেবা বিঘিœত হচ্ছে। নার্সদের পক্ষ থেকে বার বার প্রশিক্ষণের দাবি তোলা হলেও তা কাজে আসেনি।

শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার নেই। নেই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সেবা দেয়ার মতো উন্নত আইসিইউ/এইচডিইউ। ফলে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ এবং শ্বাসনালীতে আঘাতপ্রাপ্তদের এখানে রাখা যাচ্ছে না। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের অনুরোধেও ঢাকায় রোগী রেফার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞরা কোনো রোগীকে তার ইউনিটে না রেখে ঢাকায় পাঠাতে চাইলে সেখানে তাদের কিছুই করার থাকে না। তাদের মতে বরিশাল বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটটিতে শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০০ অগ্নিদগ্ধ সেবা পেয়েছেন। এখানে অপারেশন করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার জনের। তবে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমস্যা অচিরেই সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App