×

সারাদেশ

সুনামগঞ্জে পানি কমেছে দুর্ভোগ কমেনি মানুষের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪০ এএম

সুনামগঞ্জে পানি কমেছে দুর্ভোগ কমেনি মানুষের

বৃষ্টি না হওয়ায় নদনদী ও হাওড়ের পানি আরো কমেছে সুনামগঞ্জে। কিন্তু এখনো গ্রামীণ রাস্তাঘাটে পানি থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাওড়াঞ্চলের মানুষ। এদিকে গাইবান্ধায় নদীর পানি কোথাও বাড়ছে কোথাও কমছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, সুনামগঞ্জ থেকে : গত ৪ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় নদনদী ও হাওড়ের পানি আরো কমেছে সুনামগঞ্জ জেলায়। কিন্তু এখনো গ্রামীণ রাস্তাঘাটে পানি থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাওড়াঞ্চলের মানুষ। গতকাল শুক্রবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ। সুনামগঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে ও শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় নদনদী ও হাওড়ের পানি আরো কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে উজানের ঢলও নেমেছে কম। তাই জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ অন্য নদনদীর পানিও কমেছে অনেকটাই। তবে গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় দুর্ভোগ হচ্ছে মানুষের।

শুক্রবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার একই সময়ে সেখানে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। গত দুদিনে সুরমা নদীর পানি কমেছে ৩০ সেন্টিমিটার।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, তার বাড়ির সামনের রাস্তায় গত এক সপ্তাহ ধরে পানি জমে থাকায় চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছিল, তবে পানি এখন আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উজানে মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জে পানি বাড়ে। গত ৪ দিন দুই জায়গাতেই ভারি কোনো বৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে মেঘালয়ে বৃষ্টি না হওয়ায় সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামেনি। তাই সুনামগঞ্জের নদনদী ও হাওড়ে পানি কমছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মনে।

এর আগে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ জেলা সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকের মধ্যে গত বছরের মতো ভয়াবহ বন্যা হবে কিনা, এ নিয়ে দেখা দেয় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।

তবে এখন পানি কমায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কালীপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির আহমদ বলেন, পানি অনেকটাই কমেছে। টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যেভাবে পানি বাড়ছিল তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুধু আমি নই সবার মনেই গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ভয় ছিল।

সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি কোনো বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি জানান, বৃষ্টি হলে সেটা হবে হালকা কিংবা মাঝারি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্ট ছাড়া অন্য সব পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে আছে। ছাতকে এখনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, বৌলাই, পাঠলাই, রক্তিসহ নলজুর, কুশিয়ারা, কালনী, চলতিসহ জেলার সব নদীর পানিই কমছে। একইভাবে ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যেসব গ্রামীণ রাস্তা প্লাবিত হয়েছিল, সেসব রাস্তা থেকেও ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে যেসব রাস্তায় এখনো পানি আছে সেসব এলাকার মানুষ এখনো ভোগান্তিতে আছেন।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেছেন, সুনামগঞ্জের নদনদী ও হাওড়ে এখন যে পানি আছে, সেটা এ এলাকার জন্য অনেকটা স্বাভাবিক বর্ষা। তবে টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় সে আশঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে। সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও সেটি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও রয়েছে জেলা প্রশাসনের।

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা থেকে : গাইবান্ধায় করতোয়া বাদে সবগুলো নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। গতকাল বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১২২ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি ১৮৭ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ৬৭ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার পানি ৩০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি কমেও বৃদ্ধি পায়। এতে করে গাইবান্ধার ১৬৫টি চরের নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, নদনদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রকল্প নাই। এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে ভাঙন রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সিংগিজানি এলাকায় দেড় হাজার মিটার এলাকায় তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ৩০০ পরিবার ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি ও আবাদি জমি হারিয়েছে।

জিও ব্যাগ ফেলে ৮০০ মিটার এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে সক্ষম হলেও আরো ৬০০ মিটার এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, পারদিয়া ও কুন্দেরপাড়া গ্রাম, মোল্লারচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ২০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এখানে গৃহহারা হয়েছে অন্তত ১৫০ পরিবার। এর মধ্যে ৮০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন বন্ধ করা হলেও ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙন রয়েছে।

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, হলদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছিল। সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে তা বন্ধ করা হয়েছে। নদীতে পানির স্তর কম থাকায় আপাতত ভাঙন দেখা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App