×

সারাদেশ

কমছে পানি, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম

কমছে পানি, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

আশঙ্কা রোগবালাইয়েরও

হাওড়বেষ্টিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে গত তিন দিন বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার প্রধান নদী সুরমা, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও বোলাই নদীসহ বিভিন্ন উপজেলার নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি কমলেও জেলার তাহিরপুর, বিশম্ভরপুর, মধ্যনগর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষরা পড়েছেন দুর্ভোগে। এদিকে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন নদনদীতেও পানি কমতে শুরু করেছে। তবে জেলার একমাত্র খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরগতিতে। তাছাড়া অন্যান্য নদ-নদীতে পানি হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে সিলেটে নদনদীর পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিøষ্টরা।

এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

সাজ্জাদ হোসেন, সুনামগঞ্জ থেকে : নদ-নদীর পানি কমলেও তাদের বসতভিটার আঙিনা থেকে এখনো পানি নামেনি। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া গ্রামীণ রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে জমেছে কাঁদা। এমন রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচল করতে মানুষজনকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ফলে অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে পানির কাদামাখা রাস্তাঘাট মাড়িয়ে হাটবাজারে যাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫মি মিটার, তাহিরপুরে ১৫ মি মিটার, ছাতকে ৪ মি মিটার ও দিরাইয়ে ০মি মিটার। তবে গতকাল বুধবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয়-সাত দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদনদী ও হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নিচু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করে। তবে এরই মধ্যে শহরের নিচু এলাকা থেকে পানি নামলেও নিম্নাঞ্চল এখনো ডুবে আছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার লোকজন।

তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল কাউকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তৌফিক মিয়া বলেন, ঢলের পানি ঘরের ভেতর থেকে নামলেও রয়েছে উঠোনে। রাস্তাঘাট থেকে পানি নামলেও কাঁদামাটিতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে কাঁদামাটি, সেঁতসেঁতে পানি মাড়িয়েই যেতে হচ্ছে হাটবাজারে। মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা রাসেল মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। বাড়ি থেকে পানি নামলেও গ্রামীণ রাস্তাঘাটগুলোর বেহাল দশায় বাড়ি থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারপরও জরুরি প্রয়োজনে এসব অতিক্রম করেই হাটবাজারে যেতে হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো ভারী বৃষ্টিপাতসহ ছোটখাটো বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে।

এ শফিকুল ইসলাম, নেত্রকোণা থেকে : নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) মো. সারোয়ার জাহান জানান, আজ (বুধবার) থেকে বিভিন্ন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অন্যদিকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। একদম কাকডাকা ভোরে কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টিপাত হলেও সকাল ৮টার পর থেকে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত জেলার প্রায় সব জায়গায় রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজমান রয়েছে।

খালেদ আহমদ, সিলেট অফিস থেকে : সিলেটে নদনদীর পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের তথ্যমতে গত দুদিনে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সিলেট ওসমানী হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে অন্তত ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের সবাই শরীরে ফুলা উঠা, পঁচে যাওয়াসহ নানা রকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। রোগীদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে ঈদের আগের দিন থেকে টানা ৬ দিন বৃষ্টিপাতের পর গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটের আকাশ রোদ ঝলমলে। সিলেটবাসীর কাছে এটি স্বস্তির রোদই বলা যায়। বৃষ্টি থামায় এবং রোদ উঠায় কেটেছে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, কমতে শুরু করেছে সিলেটের নদনদীর পানি। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App