×

সারাদেশ

সিলেট ও সুনামগঞ্জে রোদের ঝলকানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১১:১১ এএম

সিলেট ও সুনামগঞ্জে রোদের ঝলকানি

ছবি: ভোরের কাগজ

নেত্রকোনায় নদীর পানি বেড়ে নতুন এলাকা প্লাবিত

টানা কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টির পরে সিলেট ও সুনামগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার রোদের ঝলকানি দেখা গেছে। এতে নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নেত্রকোনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

নেত্রকোনা : অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে দুর্গাপুর উপজেলার নেতাই নদীর পানি উপচে অন্তত ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গত সোমবার রাতে পাশের জেলা ময়মনসিংহের ধোবাউড়া অংশের বাঁধ ভেঙে নেতাই নদীর পানি লোকলয়ে প্রবেশ করে। এতে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। মঙ্গলবার সকালের দিকে সোমেশ্বরী ও কংস নদীর পানি কমছিল; তবে দুপুর ১২টার পর থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। হাওড়ের ধনু নদী পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, মঙ্গলবার উব্ধাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল হাসান জানান, বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, বাঁধ ভেঙে দুর্গাপুরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দিদের মাঝে চিড়া, মুড়ি ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক জানান, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও বারান্দায় পানি ঢুকেছে।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে পানিবন্দিদের উদ্ধারে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সিলেট : বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। এ কারণে সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন ছোট বড় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৮৬ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩০৭ মিলিমিটারের বেশি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় সিলেটে দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সেটি কমে ১১ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সেখানে ১০ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সেটি কমে ১০ দশমিক শূন্য ১ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়।

কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার। সেখানে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি ছিল ১০ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সেখানে ১০ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকালে সেখানে ৯ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। লুভা নদীর লুভাছড়া পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যায় ১২ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সেটি কমে ১১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়। সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা

১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। সেখানে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়।

সুনামগঞ্জ : গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণের পর মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের আকাশে রোদের ঝলকানি দেখা গেছে। যদিও এদিন সকালে কিছু সময় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে জেলার কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এর আগে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌর শহর, জেলা সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা দেখা দেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সোমবার একই সময়ে সেখানে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। একই দিন ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ১৭০ মিলিমিটার।

ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের পাশা হিমু বলেন, বন্যা না হলেও এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পানি আছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে বন্যা নিয়ে মানুষের মনে যে ভয় সৃষ্টি হয়েছিল, গতকাল রোদ ওঠায় তা কেটে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, বৃষ্টি না হলে পানি আরো কমবে। যদিও সুনামগঞ্জে আগামী কয়েকদিন হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আপাতত জেলায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, নদী ও হাওড়ের পানি বাড়লেও সুনামগঞ্জের কোথাও এখন পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App