×

সারাদেশ

ক্ষত বিক্ষত দাউদকান্দির আঞ্চলিক সড়ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৩:৫৭ পিএম

ক্ষত বিক্ষত দাউদকান্দির আঞ্চলিক সড়ক

ছবি: ভোরের কাগজ

ক্ষত বিক্ষত দাউদকান্দির আঞ্চলিক সড়ক
ক্ষত বিক্ষত দাউদকান্দির আঞ্চলিক সড়ক

সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। পিচ ঢালাই উঠে দিনে দিনে বাড়ছে গর্তের সংখ্যা। নিম্ন মানের কাজ হওয়ায় বছর ঘুরতেই এ চিত্র ফুটে উঠে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের। আবার দীর্ঘদিন অনেক সড়কের কাজই হয়নি। এখন এমন অবস্থা যে সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও চলাচল করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। এ উপজেলার বেশিরভাগ আঞ্চলিক সড়কেরই এমন করুণ দশা। এ কারণে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩০টি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে ৪৬ সড়কেই কমবেশি ভাঙ্গাচুরা। তারমধ্যে বেশি খারাপ থাকা ২৮ সড়ক সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সুন্দলপুর মডেল ইউনিয়নের শহিদনগর থেকে জুরানপুর হয়ে গোয়ালমারী বাজার পর্যন্ত ৮কিলোমিটার সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে জুরানপুর আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত ছাত্রছাত্রীসহ, কয়েকটি বাজার ও ৪-৫টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়কটির দশপাড়া, ষোলপাড়া, ভাগলপুর ও শহিদনগর অংশে খানাখন্দ, খোয়া বের হয়ে অনেক স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হলেও সড়কের অনেক স্থানে আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি থেকে আসা পানি জমে থাকে। সড়কের গর্তগুলো কাদাপানিতে একাকার। হেঁটে চলাচল একেবারে অনুপযোগী। গর্তে অনেক সময় সিএনজিচালিত আটোরিকশা উল্টে যাওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। অব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতার কারণে এটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহিদনগর- মনির মার্কেট হয়ে বিটেশ্বর ইউপি অফিস ভায়া বড়গোয়ালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিটেশ্বর ইউপি অফিস (তিনপাড়া) শিবপুর দড়িগোয়ালী সড়ক দুটি প্রায় আট বছর ধরে সংস্কার হয়নি। একই অবস্থা এই ইউনিয়নের মনির মার্কেট- চখমখোলা-নোয়গাও সড়কের। এই ইউনিয়নে সড়কের জন্য এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে। সড়কে চলাচলকারী দশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব, নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা চরম অবহেলিত এলাকায় বাস করি। দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কটির অবস্থা খারাপ, কিন্তু দেখার কেউ নেই।

সিএনজি চালক নজরুল বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ সড়কের এমন অবস্থা যে, সিএনজি চালাতে গিয়ে গায়ে ব্যথা হয়ে যায়। যাত্রীদেরও একই অবস্থা হয়। সুন্দলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসলাম মিয়াজী ভোরের কাগজকে বলেন, শহিদনগর থেকে সুন্দলপুর, জুরানপুর হয়ে গোয়ালমারী বাজার পর্যন্ত ৮কিলোমিটার সড়কটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সড়কটি সংস্কারে একাধিকবার প্রস্তাবনা করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। সর্বশেষ তিনকোটি টাকার উপরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন ননঅফিসিয়ালি খরচের জন্য আটকে আছে।

একই চিত্র বরকোটা পিতাম্বর্দি সড়কের। সড়কটির করকোটা স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এবং মনস্যা বাড়ী এলাকায় পিচঢালাই উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের উপর দিয়ে হেলেদুলে চলছে ছোট বড় যানবাহন। প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।

মারুকা ইউনয়িনের ভরনপাড়া ইউপি কমপ্লেক্স হতে চশই উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটিতে হাঁটু সমান কাদা আর বড় বড় গর্তে জমে রয়েছে পানি। সড়ক না চাষের জমি দেখে বুঝার উপায় নেই। এ সড়কে প্রতিদিন কয়েক গ্রামের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন।

চশই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরীফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর কথা ভেবে সড়কটি মেরামত করার জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন, তবে কোনো লাভ হয়নি। বৃষ্টি হলে সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলাচল করা যায় না। অনেক জায়গায় পায়ে হাটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।

সড়কে চলাচলকারী চশই গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, আমরা অবহেলিত, আমাদের দেখার কেউ নেই, তাই বর্ষাকালে কাদা আর শুষ্ক মৌসমে ধুলা ঝড়ে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।

একই উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের কানড়া-চারপাড়া-জায়গীর-দশপাড়া সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয় না। সড়কটির পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন এই সড়কে যানবাহন চলাচল মুশকিল হয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯২ সালে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের তিন কিলোমিটার অংশ পাকা করা হয়েছিল। এরপর থেকে আর সড়টির সংস্কার হয়নি। অথচ এই সড়ক দিয়ে কানড়া, জায়গীর, চ-ীপাশা, রাঙ্গাশিমুলিয়া, চারপাড়া, সাতপাড়া, বেকীসাতপাড়া ও ইছাপুর গ্রামের ছয় হাজার লোকজন ছাড়াও জায়গীর কামিল মাদ্রাসা, দশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গৌরীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন।

এই সড়কে চলাচলকারীরা বলেন, সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গত বছর আমরা মানববন্ধন করেছি। সড়কটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজারুল ইসলাম মানিক বলেন, কানড়া-চারপাড়া-জায়গীর-দশপাড়া সড়কটির ছয় আগে দরপত্র হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু কি কারনে ঠিকাদার কাজ শুরু করছে না তা বলতে পারবো না।

দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আফসার হোসেন খন্দকার ভোরের কাগজকে বলেন, উপজেলার ১৩০টি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে ৪৬ সড়কেই কমবেশি ভাঙাচুরা। তারমধ্যে বেশি খারাপ থাকা ২৮ সড়ক সংস্কারের জন্য ৫৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ননঅফিসিয়ালি খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোন জিনিস আনতে গেলে খরচ লাগে, যে এলাকার লোকজন খরচ করতে পারে সে এলাকায় কাজ হয়। আমাদের প্রস্তাব পাঠানো ছাড়া কিছুই করার নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App