×

সারাদেশ

বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম

বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। অনেক নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি সহসাই কমছে না। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় দেশের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। এমনকি আগামী দুই দিন বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থা সমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এরফলে এসময় এ অঞ্চলের কতিপয় নদী, যেমন: সুরমা, কুশিয়ারা, যদুকাটা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এই বৃষ্টি ক্রমাগত হতে থাকলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে দ্বিতীয়বারের মতো পাহাড়ি ঢল নেমেছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজানের এ ঢলে হাওড় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ জেলায় বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রবল বেগে পানি প্রবাহে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আটকা পড়েছেন পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীরা। নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডালিয়া ডিভিশন অফিস সুত্রে যানা যায়, শনিবার (১ জুলাই) সকাল ৬ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক) পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে৷ দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা বেষ্টিত টেপাখরিবাড়ী, গয়াবাড়ী ও খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু অঞ্চলে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অনেকের চাল, ডাল, তরকারী ও জ্বালানী। বর্তমানে তিস্তায় পানি স্বাভাবিক থাকলেও জনপ্রতিনিধি বিহীন এই তিন ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ যেন চরমে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার দেড় মিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৯ মিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ১ দশমিক ৭১ মিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১ দশমিক ৩৭ মিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১ দশমিক ৬২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে, রংপুরের ছোট নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। যমুনেশ্বরী নদী বদরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ দশমিক ৬২ মিটার ও ঘাঘট নদী জাফরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪ দশমিক ৩৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ঈদের দিন পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। আবার কমে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হালনাগাদ তথ্য সব সময় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকা বাসিন্দাদের জানাচ্ছি। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় এ অঞ্চলের পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App