×

সারাদেশ

শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রেপ্তার ৩

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩, ০৬:০২ পিএম

শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রেপ্তার ৩

অভিযুক্ত শ্বশুর। ছবি: ভোরের কাগজ

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় নিজ পুত্রবধূ ও দুই সন্তানের মা রাব্বী (১০) সাব্বির (৩)) ইসমত আরাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করেছে শ্বশুর আনিছুর মণ্ডল (৬০)। গত শুক্রবার আনুমানিক বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের পূর্বপাড়ার নিজ বাড়িতে আনিছুর মণ্ডল তার পুত্রবধূকে ধর্ষণে ব্যর্থ হত্যা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিহতের মা-বাবা, ভাবী ঝর্না বেগমসহ অপর দুই বোন এই অভিযোগ করেন। তবে পুলিশ বলছে ধর্ষনে ব্যর্থ হয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় রাতেই অভিযুক্ত আনিছুর মন্ডল, তার স্ত্রী হালিমা বেগম (৫২) ও নিহতের স্বামী মজনুুর রহমান মল্ডলকে (৩২) গ্রেপ্তার করে চৌগাছা থানা পুলিশ।

শনিবার নিহতের ভাই সেলিম রেজা বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আসামি করে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইসমত আরা চৌগাছা পৌরসভার বিশ্বাসপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মশিয়ার রহমানের মেয়ে এবং পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদাহ গ্রামের মজনুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন।

এজাহারে নিহতের ভাই বলেছেন, ১ নং অভিযুক্ত আনিছুর মন্ডল বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রায়ই আমার বোনকে কুপ্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে শ্লীতহানির চেষ্টা করে আসছিল। গতকাল ৩০ জুন আনিছুর মন্ডল আমার বোনকে তার ধর্ষণের (জোরপূর্বক যৌনসঙ্গম) চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপরে অপরাপর আসামিদের যোগসাজশ্যে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

তবে নিহত গৃহবধূর ভাবী ঝর্না বেগমসহ মা এবং অপরাপর বোনদের দাবি, ইসমত আরাকে ধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করেছে তার শ্বশুর আনিছুর মণ্ডল।

নিহতের ভাবী ঝর্না বেগম বলেন, গতকাল (শুক্রবার) এশার নামাজ শেষে ইসমত আরার খালা শাশুড়ি (আমাদের বিশ্বাসপাড়া গ্রামের প্রতিবেশী) হিরা বেগম আমাদেরকে তার মৃত্যুর খবর দেন। প্রথমে গ্যাস স্প্রে করে এবং কিছুক্ষণ পরে গলায় দড়ি দিয়ে ইসমত আরা আত্মহত্যা করেছে বলে জানান তিনি। খবর পেয়ে আমি নিহতের বাড়ি গিয়ে দেখি তার শ্বশুরবাড়ির বাইরে খাটে বসে বিড়ি টানছে। তখন একজন রাব্বির মা (নিহত ইসমত আরা) কোথায় জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান জানেন না বলে জানান।

ঝর্না আরো বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের নির্দেশে একজন নারী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহের সুরতহাল করা হয়। সেসময় দেখি তার কাপড় ছেড়া ও সেলোয়ার খোলা। নিহতের নাক ও যৌনাঙ্গ রক্তাক্ত এবং গলায় আঙুলের ছাপসহ শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।

নিহতের মাসহ অপরাপর স্বজনরা বলেন, এর আগেও তার শ্বশুর তাকে কয়েকবার ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। তখন তার স্বামী এবং তার শাশুড়িকে আমরা জানিয়েছিলাম। সেসময় তার শাশুড়ি এরকম ঘটনা আর হবেনা বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ তাকে বাচাতে চেষ্টা করেননি।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ইসমত আরার শাশুড়ি,স্বামী ও সন্তানরা পাশের গ্রামে তার নানী শাশুড়ি বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেসময় বাড়িতে ইসমত আরা ও তার শ্বশুর একা তাদের নিজ বাড়িতে ছিল। বিকেলের দিকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায় আনিছুর মণ্ডল গতকাল পাশের মসজিদে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে নিজ বাড়িতে ছিলেন। তখনও সেই বাড়ির একটি ছোট ঘরে ইসমত আরার মরদেহ পড়ে ছিল। তিনি বাড়িতে এসে খাটে বসে বিড়ি টানছিলেন। এরপরে পুলিশ গিয়ে তাকেসহ অপরাপর সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি- তদন্ত) জেল্লাল হোসেন বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। লাশের সুরতহাল শেষে ওই রাতেই অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য লাশ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ও গ্রেপ্তারকৃতদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে তিনি বলেন, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়েই নিহতের শ্বশুর আনিছুর মণ্ডল তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে আমার কাছে স্বীকার করেছে। তারপরেও ময়নাতদন্তের ফলাফল না পেয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App