×

সারাদেশ

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি চরমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি চরমে

ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি চরমে পৌঁচেছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। অথচ আদায় হয়েছে মাত্র ৬শ ২৭ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৪শ কোটি টাকা।

সরজমিনে ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে সাতক্ষীরা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার। যে কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করলেও এই বন্দর দিয়ে সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ নেই। দ্বৈতনীতি প্রভাবে বন্দরের প্রকৃত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ব্যবসায়ীরা। দ্বৈতনীতি বাদ দিয়ে দেশের সকল বন্দরে একনীতি বাস্তবায়ন, সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে ভোমরা বন্দর থেকে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব।

অথচ করোনার পর চলমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি ও ডলার সংকটসহ দ্বৈতনীতির প্রভাবে বন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও ফেরেনি স্বাভাবিক গতি। যার ফলে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে সরকারও হারিয়েছে বিপুল অংকের রাজস্ব। এছাড়াও ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহও রাজস্ব ঘাটতির আরেকটি কারণ।

আরো দেখা গেছে সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর ঘোষণা করার পরও সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছেন না বন্দর ব্যবহারকারীরা।যার কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিগত অর্থবছরগুলোতে লক্ষ্য করা যায় এ বন্দর দিয়ে সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আদায় করেছে যা লক্ষ্যমাত্রার দুই/ তিনগুণ অতিক্রম করেছে। অথচ এবন্দর দিয়ে সকল পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায়, বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে সূত্রে, ২০২২/২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৬শ ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ,আগষ্ট ৫৫ কোটি ৩ লাখ, সেপ্টেম্বর ৫৪ কোটি ৬০ লাখ,অক্টোবর ৪০ কোটি ৯৫ লাখ,নভেম্বর ৪২ কোটি ৭ লাখ, ডিসেম্বর ৩৯ কোটি ৯১ লাখ,জানুয়ারি ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ,ফেব্রুয়ারি ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ,মার্চ ৭৪ কোটি ১৬ লাখ,এপ্রিল ৫৬ কোটি ৬ লাখ,মে ৬৫ কোটি ৪৯ লাখ ও জুনে ৫১ কোটি ২১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। ঘাটতি প্রায় ৪শ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১ হাজার ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।

আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মেসার্স মা ট্রেডার্স’র সত্ত্বধিকারী জি এম আমির হামজা বলেন, কাচাঁমাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবে সেখানেই পন্য আমদানি করবে। ভোমরা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। তাই ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। দ্বৈতনীতির প্রভাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল পণ্য আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ভোমরা বন্দরে তা দেওয়া হয় না। বেনাপোলসহ দেশের প্রায় সকল বন্দরে ট্রাক প্রতি কাচাঁমাল আমদানিতে এক থেকে তিন টন ছাড় দেওয়া হয়। সেখানে ভোমরা বন্দরে এক কেজিও ছাড় দেওয়া হয় না। ফলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরের ঝুঁকেছে। ব্যবসায়ীদের একটু ছাড় দিলে ব্যবসায়ীরা আবারো ভোমরা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করেন আমির হামজা।

রাজস্ব আদায়ের ঘাটতির কারন ব্যাখায় তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারনে ডলারের সংকট থাকায় কাচাঁমালের এলসি নাপাওয়াসহ পাশাপাশি দুটি পোর্টের বিগত তিন/চার বছর অসম প্রতিযোগীতাকে অন্যতম কারন হিসেবে ব্যাখা করেন। বেনাপোল বন্দরে সকল পন্যে ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে ভোমরা বন্দরে ব্যবসায়ীদের বঞ্জিত করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সচল থাকলেও শুধুমাত্র দ্বৈতনীতির কারনে পূর্বের ন্যায় বন্দরে সেই স্বাভাবিক গতি ফেরেনি।

ভোমরা স্থল বন্দরের সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ভোমরা বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি টাকা। এখন হাজার কোটি টাকার বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। মূলত বন্দর দিয়ে ৭৫টি পণ্য আমদানির সুযোগ থাকলেও বাস্তবে ২৫-৩০টি পণ্য আমদানি হয়।

তিনি বলেন, দ্বৈতনীতি, অবকাঠামো উন্নয়নের ধীর গতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও বন্দরের তিনটি বিভাগের সমন্বয় হিনতার কারনে ভোমরা স্থল বন্দরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার অন্যতম কারন হিসাবে চিহ্নিত করেন। পার্শবর্তী বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের প্রতিযোগিতা চলে শুরু থেকেই। বেনাপোলসহ অন্য বন্দরে ব্যবসায়ীদের যে পরিমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়, তুলনামুলকভাবে ভোমরা বন্দর ব্যবসায়ীরা কোন সুযোগ সুবিধা পায়না। পূর্বে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হতো না। ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করতো। বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও ফলমূল আমদানি হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীক সুবিধার্থে অনেক ব্যবসায়ী এখন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করায় ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কমেছে। ব্যবসায়ীরা যেখানে বেশী সুবিধা পাবে সেখানে ঝুঁকবে এটিই স্বাভাবিক।

তিনি আরো বলেন,বেনাপোলে কাষ্টম হাউস আছে। ওখানে কমিশনার নিজে অফিস করেন এবং সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহন করেন। রাজস্ব আদায়ের এনবিআরের জবাব দিহিতা থাকায় তিনি নিজের মত করে বন্দর পরিচালনা করেন। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সুযোগ সুবিধা পায়। পক্ষান্তরে ভোমরা বন্দরে কাষ্টমস হাউস নাথাকায় খুলনা কমিশনার কতৃক পরিচালিত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে তার কোন জবাব দিহিতা নাই। ফলে ডেপুটি কমিশনার দ্বারা পরিচালিত হওয়া ভোমরা বন্দর রাজস্ব আদায়ের ঘাটতির অন্যতম কারন হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ভোমরা স্থল বন্দর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামুল হাসান লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এ ঘাটতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। সুযোগ সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। দ্বৈতনীতির প্রভাব সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টা আমার জানা নাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App