×

সারাদেশ

কুড়িগ্রামে ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ০৯:৩৬ পিএম

কুড়িগ্রামে ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দী

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। এখনো আসেনি ত্রাণ। বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলের মানুষেরা ভীষণ দুর্ভোগে পড়েছেন। ছবি: ভোরের কাগজ

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপিরিবর্তিত রয়েছে।

জেলাটির ৯ উপজেলায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতায় এরই মধ্যে দুইটি চরের ২১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে । সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চরাঞ্চলে ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো।

বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন জেগে ওঠা চরের ঘরবাড়িগুলো পাঁচদিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় নিদারুণ কষ্টের রয়েছে পরিবারগুলো । ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান নেয়া অনেক পরিবার শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, মুসারচর ও সদর উপজেলার পোড়ার চরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার ঘর বাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই পরিবারগুলোর ঘর বাড়ি তলিয়ে থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না। পাশাপাশি এসব পরিবারের হাতে কোন কাজ না থাকায় এবং নলকুপ তলিয়ে থাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে।

এদিকে নদনদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

চারণভূমি তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিকেল তিনটায় দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জেলার দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার,ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পানি হ্রাস অব্যাহত ছিল।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুর্ববালাডোবার চরের আব্দুর রহমান বলেন, এই চরে চারটি পরিবারের বসবাস। চরটি নতুন এবং নিচু হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ ঘর বাড়িতে কোমর সমান পানি উঠেছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা ও নৌকায় বসবাস করছেন। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় ঠিকমত পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকমত রান্না করতে না পারায় অনেকে একবেলা খেয়েই দিন পার করছে। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গুজিমারির চরের আছোর উদ্দিন জানান, পানি ধীর গতিতে কমলেও স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। তার গুজিমারির চরের উত্তর অংশে এবং দক্ষিণ অংশে গত চারদিনের মধ্যে মোট ২১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনের ফলে লোকজন হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগুয়ায় অবস্থান নিয়ে নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। এসব বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

এদিকে, সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার মমিন বলেন, পানি হ্রাস পেলেও এখনো বাড়ির চারিদিকে পানি। আবার পানি বৃদ্ধি পায় কিনা সেই চিন্তায় আছি। পটলসহ সব সবজি ক্ষেত পানির নিচে। কিভাবে জীবন বাঁচাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে খুব দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া আছে। নগদ অর্থ শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজন সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ত্রান বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App