×

সারাদেশ

গাইবান্ধায় পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম

গাইবান্ধায় পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ
গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী দারিয়াপুর পশুরহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের কাছেও অবৈধভাবে টোল নেয়া হচ্ছে। ফলে কুরবানির পশু কিনতে গিয়ে ব্যাপারী (পাইকার) ও স্থানীয় মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এদিকে প্রতিটি হাটে টোল আদায়ের মূল্য তালিকা টানানো বাধ্যতামুলক। কিন্তু ওই হাটে তালিকা টানানো হয়নি। তবে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফুল আলম বলেন, গবাদিপশু সহ ১২৫ প্রকার দ্রব্যাদি বেচাকেনার জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু ও মহিষ সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ও ভেড়া ১৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে কেবল ক্রেতারা টোল প্রদান করবেন, বিক্রেতা নন। গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে দারিয়াপুর পশুরহাট। হাটটি গাইবান্ধা সদর উপজেলার অন্তর্গত। এই হাটটি শুক্রবার ও মঙ্গলবার বসে। গত মঙ্গলবার বিকেলে দারিয়াপুর পশুরহাট ঘুরে দেখা গেছে, মাঠভর্তি গরু ছাগল। পশুর আমদানি প্রচুর। কিন্তু স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা অনেকটা কম। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারদের হাটে উপস্থিত ছিলো সবচেয়ে বেশি। হাটে আসা ব্যাপারী (পাইকার) ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত টোল আদায়ের পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছেও টোল নেয়া হচ্ছে। অথচ বিক্রেতাদের কাছে টোল নেয়া নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। এ হাটে গরু কিনতে আসা গরুর ব্যাপারী জামালপুর জেলার সানন্দাবাড়ির আব্দুল জোব্বার বলেন, একটি গরু কিনতে ইজারাদারকে ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি যার কাছে গরু কিনেছি তার জন্য আমাকে ৩০০ টাকা সহ মোট ৯০০ টাকা দিতে হলো। ব্যাপারী জহির, রেজাউল ও বাদশা একই কথা বলেন। ইজারদার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তারা বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের ইজারদারের রশিদে কেবল ক্রেতার নাম ও পশুর মূল্য লেখা থাকে। টোল আদায়ের পরিমাণ লেখা থাকে না। তার প্রমাণ মেলে, গাইবান্ধার পলাশাবাড়ী উপজেলার ঢোলভাঙ্গা গ্রামের আব্দুর সাত্তার একটি গরু ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কেনেন। ইজাদারের দেয়া ৬৬৩৮৮ নম্বর রশিদে টোলের পরিমাণ লেখার জায়গা নেই। শুধু গরুর দাম ও ক্রেতা-বিক্রেতার নাম-ঠিকানা অস্পষ্ট লিখে দেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ঘাঘোয়া গ্রামের কলেজশিক্ষক ময়নুল হক মন্ডল বলেন,  একটি গরু কিনলে ক্রেতাকে ৪০০ টাকা টোল দেয়ার জন্য প্রশাসন নির্ধারণ করে দেয়। অথচ এ হাটে কোরবানির গরু কিনে আমাকে ৬০০ টাকা টোল দিতে হয়েছে। আমি যার কাছে গরু কিনেছি তার কাছ থেকেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩০০ টাকা টোল নেয়া হয়। ময়নুলের কাছে গরু বিক্রেতা একই উপজেলার চাপাদহ গ্রামের মোনারুল মিয়া (৪৫) বিক্রির জন্য ৩০০ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গরু বিক্রির পর আমার কাছে ৩০০ টাকা টোল নিল ইজাদারের লোকজন। একই অভিযোগ করেন-ক্রেতা মনটু ও আকরাম। এই হাটে আসা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের চাকরিজীবী শামসুল হক বলেন, একটি ছাগল কিনে ২৫০ টাকা টোল দিতে হয়েছে। বিক্রেতার কাছেও ১০০ টাকা টোল নেয়া হয়েছে। দারিয়াপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি আবদুল জলিল বলেন, হাটে টোল আদায়ের মূল্য তালিকা থাকলে ইজাদাররা অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবে না। তাই ইজাদাররা মূল্য তালিকা লাগান না। এ বছর বাংলা সন বৈশাখ মাস থেকে দারিয়াপুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে দু’দফায় মানববন্ধন ও মিছিল সমাবেশ করা হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দারিয়াপুর হাট ইজারদার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আয়ান মিয়া বলেন, বহুদিন ধরে ক্রেতাদের কাছে ৬০০ এবং বিক্রেতাদের কাছে ৩০০ টাকা টোল নেওয়া হচ্ছে। আমরা অনেকের কাছে কমও নিচ্ছি। বিক্রেতাদের কাছে টোল নেওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকার ১৬ বছর আগে এই টোল নির্ধারণ করে। আমরা টোলের দর পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তবে আমরা পাইকারদের কাছে অর্থাৎ ক্রেতার কাছে টোল নিচ্ছি। বিক্রেতাদের কাছে নিচ্ছি না। এসব বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, কোনো পশুরহাটে যাতে অতিরিক্ত ও অবৈধভাবে টোল আদায় করা না হয়, সেজন্য সার্বক্ষণিক তদাকরি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর ইউএনও শরীফুল আলম বলেন, মঙ্গলবার দারিয়াপুর পশুরহাটে সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) রেজাউল ইসলামকে পাঠানো হয়। তিনি গিয়ে ইজারদারকে পাননি। পরে ইজাদারের লোকজনকে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। ইউএনও আরও বলেন, এরপরও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হলে জরিমানা এবং ইজাদারের চুক্তি বাতিল করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App