×

সারাদেশ

চসিক’র ১৮৮৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ০৬:১৮ পিএম

চসিক’র ১৮৮৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’র আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২১ জুন) দুপুরে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চসিক’র পুরাতন নগর ভবনের কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেট ঘোষণা করেন-সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এটি তার তৃতীয় বাজেট। নতুন অর্থবছরের বাজেটের পাশাপাশি গত (২০২২-২৩) অর্থবছরের ১ হাজার ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়। ওই অর্থবছরে মোট ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা কম। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭১১ কোটি টাকার বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের বাজেটে। গতবারের চেয়ে এবার কম প্রস্তাব করার বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে গতবারের চেয়ে এবার বাজেটের প্রস্তাবিত আকার ছোট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সেবার কোনো ব্যত্যয় ঘটবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, নাগরিক সেবা আগের মতোই চালু থাকবে। এতে কোনো ব্যত্যয় হবে না। বাজেট অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যয় সংকোচন নীতি ঘোষণা করেছেন। তাই আমরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়েছি। বাজেট বাস্তবায়নের হার ৫৫ শতাংশ। নতুন অর্থ বছরেও তাই বাজেট গতবারের চেয়ে কম রেখেছি। নিজস্ব আয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। সরকার থেকে আগের মত তেমন থোক বরাদ্দ দেয়া হয় না। প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ পাই শুধু। আয় বাড়াতে বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানির ওপর কর আরোপের অনুমতি সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে চসিক কর-ফি আদায় করবে। তখন আর সরকারি বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না। এদিকে, গত অর্থ বছরের বাজেট অনুদান নির্ভর থাকলেও এবার উন্নয়ন অনুদান ও গৃহকর আদায়কে আয়ের মূল খাত দেখিয়ে এ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে চসিক। এবারের বাজেটে নিজস্ব উৎসে সর্বোচ্চ আয় ধরা হয়েছে ৯৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তিন ধরনের কর বাবদ মোট আয় ধরা হয়েছে ৬৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে সর্বোচ্চ আয় ধরা হয়েছে ২২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। হাল কর ও অভিকর খাতে ২২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য কর বাবদ ১৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে। একইভাবে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) তিন ধরনের করে মোট আয় ধরা হয়েছিল ৫৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুসারে এ তিন ধরনের কর খাতে চসিকের আয় হয়েছে ৩৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে ৮৯৪ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা আয় ধরা হয়। একইসঙ্গে উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ ৯৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ হয় ৬৪৩ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবারের বাজেটে দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যয় খাত বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক। এই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মেয়র বলেন, সরকারের ভিশন হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ। এই রূপকল্পের ভিত্তি হলো- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার। সেই লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে যাচ্ছে। করপোরেশনের বেশিরভাগ কার্যক্রম এখন অনলাইনভিত্তিক করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে করপোরেশনের প্রশাসনিক সব কাজ ইলেকট্রনিক সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। লিখিত বক্তব্যে মেয়র আড়াই হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর সড়ক উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা, বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কবাতি আধুনিকায়ন, পরিচ্ছনতাকর্মীদের জন্য ভবন নির্মাণ প্রকল্প সহ চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সভায় মেয়র জানান, প্রকল্পটির আওতায় ৭৪টি উপ-প্রকল্পে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকার অধিক দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে ৩৯টি দরপত্রের মূল্যায়ন চলমান। প্রকল্পটির অধীনে নিয়োজিত কনসালট্যান্টের মাধ্যমে কাজগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করছে চউক, সেই কাজ শেষ হলে এবং বাড়ইপাড়া খালের কাজ শেষ হলে অনেকটা মুক্তি পাব। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে নতুন করে ২২টি খাল মুক্ত করতে প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি। সেগুলোর অনুমোদন পেলে দখলমুক্ত ও সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব। বন্দর নগরীতে মশার উপদ্রবের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, মশক নিধনের জন্য আলাদা কোনো বিভাগ আগে ছিল না। আমরাই প্রথম করেছি। মশক নিধন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। মশামুক্ত নগরী করতে চেষ্টা করছি। এ খাতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। চসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন-অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। এসময় চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App